রাইসুল ইসলাম, পার্বতীপুর (দিনাজপুর)
দিনাজপুরের
পার্বতীপুরে পাঁচ বছরের শিশু পূজার ধর্ষক নরপিশাচ সাইফুল ইসলাম ওরফে কালা
সাইফুলের দ্রুত বিচার ও ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষেরা।
এলাকার জমিরহাট হাইস্কুল ও রঘুনাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শত শত
ছাত্র ছাত্রী সাইফুলের ফাঁসির দাবিতে মিছিল করেছে আজ বুধবার বেলা ১টা থেকে
২টা পর্যন্ত।
এদিকে, দিনাজপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর)
মোঃ মাহফুজ্জামান আশরাফ, পার্বতীপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ
মাহমুদুল আলম ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর স্বপন কুমার
চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বুধবার দুপুরে। এসময় ধর্ষক সাইফুলের সাবেক
শ্বশুর ও আপন চাচা সহির উদ্দিন জানান, বিকৃত মন ও মানসিকতার মানুষ সাইফুল।
তিন কন্যা ও এক পুত্রের জনক সে। তার মেয়ে নার্গিসকে অমানুষিকভাবে নির্যাতন
করতো। বিয়ে দেবার পরও বড় মেয়ে রেশমাকে (১৮) মারধর করতো সাইফুল। বড় মেয়ের
শ্বাশুড়ীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের কারনে তার মেয়ে নাগিস সাইফুলকে তালাক দিয়ে
দ্বিতীয় মেয়ে সুজাতা (১৩) ও তৃতীয় মেয়ে সালমাকে (১১) নিয়ে বর্তমানে ঢাকায়
অবস্থান করছে। তাদের একমাত্র ছেলে নাজমুলকে (৫) অন্যের বাড়িতে রাখা হয়েছে।
ধর্ষক
সাইফুলের বড় ভাই সাইদুল ইসলাম (৫৫) ও ছোট ভাই সাফিউল ইসলাম (৩৫) বলেছেন,
সাইফুল ইসলাম তাদের আপন ভ্রাতা হলেও মাদসাকক্ত ও দুশ্চরিত্র হওয়ার কারনে
তার সাথে কোনরূপ সম্পর্ক রাখেননি তারা।
ভিকটিম পুজার দাদা
অনিলচন্দ্র দাস বলেন, পূজা নিখোঁজ হওয়ার পর এলাকার মসজিদ থেকে মাইকিং করা
হয়। মাইকিং করার পর সাইফুল পূজার বাবাকে মাইকিং করতে নিষেধ করেন এবং মেয়েকে
পাওয়া যাবে বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। পরে ভোররাতে পূজাকে হলুদ ক্ষেত
থেকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে
সে বাধা প্রদান করে এবং শীঘ্রই পূজা সুস্থ হয়ে উঠবে বলে জানালে তাদের
সন্দেহ হয়। পরে পূজার কিছুটা জ্ঞান ফিরে এলে সে কালা সাইফুলের নাম উল্লেখ
করে। ভিকটিমের মাসীমা বুলবুলি (২২) আহাজারী করে বলেন, আমার নিজের কোন
সন্তান নাই। আমি আমার বোন রূপসির একমাত্র মেয়ে পূজাকে মেয়ের মতই স্নেহ করি।
বুলবুলিও পাষন্ড সাইফুলের ফাঁসি দাবি করেছেন।
জমিরহাট
হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ধর্ষক সাইফুলের দ্রুত বিচারে এ
ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। এলাকার হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সর্বস্তরের
মানুষের দাবি কালা সাইফুলের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
প্রদান করা হোক।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোঃ মাহফুজ্জামান
আশরাফ বলেন, লোমহর্ষক এ ঘটনায় ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য সঠিক তদন্ত এ
অকাট্য প্রমানসহ স্বাক্ষ্যের প্রয়োজন রয়েছে। ওসি মাহমুদুল আলম স্বাক্ষীদের
নির্ভয়ে সঠিক স্বাক্ষ্যদানের আহবান জানান। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই স্বপন
কুমার চৌধুরী বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্ত
ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সবার সহযোগিতার দরকার বলে
তিনি উল্লেখ করেন। আসামী সাইফুলকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়ার জন্য গতকাল
মঙ্গলবার আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ রিমান্ডের শুনানি
অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য পার্বতীপুর
উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের জমিরহাট এলাকার তকেয়াপাড়া গ্রামের সুবল চন্দ্র
দাসের কন্যা শ্রীমতি পূজা রাণী (৫) গত মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১
টার দিকে বাড়ীর বাইরে খেলতে গেলে নিখোঁজ হয়। খোঁজাখুজি করে তাকে না পেয়ে
রাত ১১ টার দিকে পার্বতীপুর মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়রী করেন তাঁর পিতা।
গত বুধবার ভোর ৬টায় পূজাকে বাড়ীর পার্শবর্তী হলুদের ক্ষেত থেকে মূমুর্ষু
অবস্থায় উদ্ধার করে তার স্বজনরা। তাকে আশংকাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে পূজার পিতা সুবল চন্দ্র দাস
বাদী হয়ে একই গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী জহির উদ্দিনের পুত্র সাইফুল ইসলাম (৪২)
ও আফজাল হোনের পুত্র কবিরাজকে (৪৮) আসামী করে পার্বতীপুর মডেল থানায় একটি
ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
0 facebook: