Wednesday, November 30, 2016

পার্বতীপুরে বিধবা-বয়ষ্ক ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে প্রতিবন্ধি, বিধবা ও বয়স্ক ভাতার ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি জানার পর আত্মসাতকৃত টাকা ভুক্তযোগীদের মাঝে ফেরত দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন। 
জানা গেছে, উপজেলার ১নং বেলাইচন্ডি ইউনিয়নের ২০১৫ সালের জুলাই মাসে নতুন ১৮১জন দুস্থ প্রতিবন্ধি, বিধবা ও বয়স্কভাতার তালিকাভুক্ত হন। এর মধ্যে বয়স্ক ৮০ জন, প্রতিবন্ধি ৭৭ জন ও বিধবা ২৪ জন রয়েছেন। নতুন তালিকাভুক্তদের মধ্যে গত ২১ নভেম্বর বেলাইচন্ডি ইউনিয়নের সদ্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নূরমোহাম্মদ রাজার গ্রামের বাড়ি কৈপুলকিতে ভাতাভোগীদের জুলাই/১৫ থেকে জুন/১৬ পর্যন্ত ১২ মাসের টাকা বিতরণ করেন সোনালী ব্যাংক হুগলিপাড়া শাখার অফিসারসহ তিন কর্মচারী। 
পার্বতীপুর সসাজসেবা অফিস সূত্র জানায়, প্রতিবন্ধিদের প্রত্যেককে মাসিক ৫০০ টাকা হিসেবে ১২ মাসে ৬০০০ টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু তাদের প্রত্যেককে ১ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে বলা হয়েছে। সূত্রটি আরও বলেছে, বিধবা ও বয়স্করা মাসিক ৪০০ টাকা করে ১২ মাসে ৪ হাজার ৮০০ টাকা করে পাওয়ার কথা। কিন্তু তাদের প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ২০০টাকা করে। এভাবে ১৮১ জন ভাতাভোগীদের মাঝে ৯ লাখ ৬১ হাজার ২০০ টাকার স্থলে ২ লাখ ৪০ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়। তবে, বিধবা ও বয়স্ক ভাতার বইয়ে যথারীতি ৪ হাজার ৮০০টাকা এবং প্রতিবন্ধিদের বইয়ে ৬০০০টাকা বিতরণ লেখা রয়েছে। 
ভাতাভোগীদের মধ্যে ফেরদৌসী বেওয়া (বই নং-২৬৬১) গ্রাম কৈপুলকি, দোলাপাড়ার ফাতেমা বেওয়া (বই নং-২৬৭৬) ও উচাপাড়ার বাসিরন বেওয়াকে (বই নং-২৬৭৭) ১ হাজার ২০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। ব্রম্মত্তপুর সোনাপুকুর গ্রামের শমসের আলী (বই নং-৬৬৩৩) ১ হাজার ২০০ টাকা পাওয়া কথা জানান। তবে তাদের প্রত্যেককে অবশিষ্ট টাকা পরে দেওয়ার কথা চেয়ারম্যান রাজা বলেছেন বলে উল্লেখ করেন। 
এব্যপারে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংক হুগলীপাড়া শাখার ম্যানেজার মোঃ রেজওয়ানুল হক জানান, ব্যাংক অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান, কর্মচারী এরশাদুল হক ও একজন সিকিউরিটি গার্ডকে টাকা বিতরণের জন্য পাঠানো হয়েছিলো। তারা সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টাকা বিতরণ শেষে ব্যাংকে ফিরে আসেন। ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, সমাজ সেবা অফিস থেকে তাদের বই দেওয়ার পর সমুদয় টাকাসহ ভাতা বই পুনরায় ভাতাভোগীদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে উপস্থিত চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ রাজা ভাতাভোগীদের কাছ থেকে বইগুলো নিয়েছিলো বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, ইউএনও তরফদার মাহমুদুর রহমান সকাল ১১টায় ভাতাভোগীদের মাঝে ভাতা বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। ১১ থেকে ১২ জনকে টাকা দেওয়ার পর ইউএনও সেখান থেকে চলে আসেন। টাকা কম দেওয়ার ব্যপারটি ওইদিন রাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছিলেন বলে ওই ব্যাংক কর্মকর্তা উল্লেখ করেন। সমাজ সেবা অফিসার রোকনুজ্জামান মন্ডল বলেন, ভাতা বিতরণ শুরু হওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার চলে যান। অল্প কিছু সময় পরে আমিও (সমাজ সেবা অফিসার) সেখান থেকে চলে আসি। একারনে সেখানে কি হয়েছিলো বিষয়টি জানতে পারিনি। তবে গত সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এব্যপারে জানতে পারি। 
এব্যপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ভাতা বিতরণ উদ্বোধন করে সেখান থেকে চলে আসি। পরে মন্ত্রী মহাদয়ের কাছে টাকা কম দেওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। মন্ত্রী মহাদয় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও জানান, বিষয়টি তদন্তের জন্য আগামী ৩ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী (১৮১ ভাতাভোগী), সমাজ সেবা অফিসার ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। 
এব্যপারে সদ্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ রাজার বক্তব্য জানার জন্য তার মুঠোফোনে আজ বুধবার সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একাধিকবার কল দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি

শেয়ার করুন

0 facebook: