Saturday, December 3, 2016

বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র

রাইসুল ইসলাম, পার্বতীপুর (দিনাজপুর)
দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট তৈরির কাজে নিয়োজিত ১ হাজার ২০০ শ্রমিক অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছে। বেতন বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাটাই বন্ধ করাসহ ৬ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শ্রমিকরা তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের সামনে অনির্দিষ্টকালের ওই কর্মবিরতি শুরু করে। এতে বিদ্যুত কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। দাবি আদায়ের লক্ষে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের বাইরে পার্বতীপুর-ফুলবাড়ী রেললাইনের ওপর বিক্ষোভ সমাবেশ করে জড়ো হন। শ্রমিকদের ৬ দফা দাবীর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, বড় পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের শ্রমিকদের নুন্যতম ৫৫০ টাকা মজুরি, কারণ ছাড়াই শ্রমিক ছাটাই বন্ধ, পূর্বের ছাইটাইকৃত শ্রমিকদের পুনর্বহাল, সাইকেল গ্যারেজ নির্মাণ, কাজ শেষে ধুলা-কাদা পরিষ্কারের জন্য নিয়মিত সাবান সরবরাহ, প্রতি মাসের ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে প্রতি শ্রমিকের মজুরি প্রদান করতে হবে। 
স্থানীয় লোকজন ও শ্রমিক সুত্রে জানা যায়, পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে। কাজ শুরুর আগে সেখানে অন্তত ১ হাজার ২০০ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নর্থ ইস্টার্ন পাওয়ার কম্পানীর (এনইপিসি) অধিনে কাজ পান স্থানীয় জহির উদ্দিন বানিয়া, রোকনুজ্জামান, জয়নাল মেম্বার, বাবু মিয়া, লিটন মিয় ও আরাফাত নামে ৬ ব্যক্তি। 
অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগ দেওয়ার সময় প্রত্যেক শ্রমিকের কাছ থেকে ওই ব্যক্তিরা ১০ থেকে ৫০ হাজার করে টাকা উৎকোচ নিয়ে এনইপিসির কাছে শ্রমিক সরবরাহ করেন। এ জন্য তারা শ্রমিক সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নর্থ ইস্টার্ন পাওয়ার কম্পানী (এনইপিসি) কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রতি শ্রমিকের জন্য দৈনিক মজুরিবাবদ ৬০০ টাকা আদায় করেন। অথচ প্রতি শ্রমিককে দেওয়া হয় মাত্র ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০টাকা। এছাড়াও শ্রমিক সরবরাহকারীরা চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শ্রমিকদের জন্য আলাদাভাবে শতকরা ৭ ভাগ কমিশন নেন। কিন্তু সে কমিশনের টাকাও শ্রমিকদের দেওয়া হয় না। 
অন্যদিকে নিয়োগ দেওয়ার পর সামান্য অজুহাত দেখিয়ে এনইপিসি কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ছাটাই করছেন। এতে অসহায় শ্রমিকরা কোন প্রতিবাদ করেও ফল পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। 
এদিকে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বক্তব্য রাখেন, শ্রমিক সংগঠনের নেতা আইয়ুব আলী, রবিউল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফা। তারা বলেন, মাত্র এক মিনিট বিলম্বে কাজে যোগদান করলেই এনইপিসি কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ছাটাই করছে। গুরুতর অসুস্থ্য হলেও তাদের কোন ছুটি দেওয়া হয়না। এছাড়াও তিনদিন অনুপস্থিত থাকলে কর্মস্থল থেকে সরাসরি ছাটাই করা হয়। তারা অযথাই শ্রমিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ হেয় প্রতিপন্ন করে শ্রমিকদের তাড়ানোর চেষ্টা করেন। আর এ সুযোগে  এনইপিসির সঙ্গে আঁতাত করে ওই শ্রমিক সরবরাহকারীর কয়েকজন ব্যক্তি নতুন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চালান। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন ছাটাইকৃত অসহায় গরিব শ্রমিকরা। এসব অত্যাচারের বিরুদ্ধে অনির্দিষ্টকালের জন্য শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নর্থ ইস্টার্ন পাওয়ার কম্পানী (এনইপিসি) অফিস প্রধান মি. ডংয়ের সঙ্গে দোভাষীর মাধ্যমে কথা হলে তিনি বলেন, ‘গরিব শ্রমিকদের মজুরী কম দেওয়া হয় না। তাদের প্রাপ্ত মজুরি প্রদান করা হয়। শ্রমিকের কাজের দক্ষতার ভিত্তিতে প্রাপ্ত মজুরী প্রদান করা হয়। তবে কাজের অদক্ষতার  কারণে অল্পসংখ্যক শ্রমিককেই ছাটাই করা হয়েছে। ঢালাওভাবে শ্রমিকদের করা সব অভিযোগ সত্য নয় বলে  জানান তিনি।
বিষয়টি নিয়ে তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক চৌধুরী নুরুজ্জামান এর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, শ্রমিকদের আন্দোলন সাব কন্ট্রাক্টরদের বিরুদ্ধে। তাপবিদ্যুত কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নয়। তবে শ্রমিকদের প্রাপ্ত মজুরীর ব্যাপারে আমাদেরকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা চীনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এনইপিসি কর্তৃপক্ষের  সঙ্গে আলোচনা করেছি। শ্রমিকদের দাবী দাওয়া নিয়ে তারাও বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আশা করছি, সুষ্ঠু আলোচনার মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।


শেয়ার করুন

0 facebook: