Sunday, December 4, 2016

পার্বতীপুরে গণ শুনানি অনুষ্ঠিত

রাইসুল ইসলাম,পার্বতীপুর (দিনাজপুর) 
গতকাল শনিবার ছিল ২৫ তম আন্তর্জাতিক ও ১৮ তম জাতীয় প্রতিবন্ধি দিবস। এইদিনে পার্বতীপুরে প্রতিবন্ধি বয়স্ক ও বিধবা ভাতা প্রাপ্তদের ভাতার টাকা আত্মসাতের গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গণশুনানিকালে ৭৭ জন প্রতিবন্ধি ৮০ জন বয়স্ক ও ২৪ জন বিধবা ভাতাপ্রাপ্তদের মধ্যে ১২৬ জন হাজির থেকে জবানবন্দি দেন। এর মধ্যে অন্তত ২২ জন টাকা কম দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। যারা পুরো টাকা পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন, তাদের অধিকাংশের মধ্যে কথার অসংলগ্নতা পরিলক্ষিত হয়। কেউ কেউ ভাতা বইয়ের লেখার চেয়েও বেশি টাকা পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। সব মিলিয়ে টাকা বিতরণে অনিয়ম দূর্নীতির প্রমান মিলেছে। 
এসময় প্রতিবন্ধি আরিফ হোসেন পিতা গণি মামুন সরদার (ভাতা বই নম্বর ১০২৮) গ্রাম বেলাইচন্ডি বাসস্যান্ড, তাকে ৬০০০টাকার মধ্যে মাত্র এক হাজার ৫০০টাকা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এই টাকা সে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ রাজার হাত থেকে পেয়েছেন বলে জানান। 
বিধবা জরিনা বেওয়া স্বামী মৃত মাহির উদ্দিন (ভাতা বই নম্বর ২৬৭০) গ্রাম উত্তর হরিরামপুর বলেন, তাকে ৪ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা। এই টাকা সে ব্যাংকের লোকের হাত থেকে নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। 
অনুরুপভাবে রোকেয়া স্বামী মৃত মজিবর রহমান (বই নং ২৬৭২) গ্রাম কাজীপাড়া জানান, তাকে ৪ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে ১২০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। মোঃ বদিউজ্জামান পিতা মোঃ ছকি শেখ (বয়স্কভাতা বই নম্বর ৬৭১৩) গ্রাম বাঘাচোড়া দেউলপাড়া তার জবানবন্দিতে বলেন, তার প্রাপ্য টাকার অর্দ্ধেক দুই হাজার ৪০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। 
শনিবার গণশুনানিকালে উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পার্বতীপুর ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ নূরল আমিন সরকার, দলের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহীদা খাতুন শাহী, সোনালী ব্যাংক হুগলিপাড়া শাখার ম্যানেজার মোঃ রেজাওনুল হক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অভিযুক্ত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ রাজা, টাকা বিতরণকারী ব্যাংক কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান, সমাজসেবা অফিসার মোঃ রোকনুজ্জামান মন্ডল, কর্মচারী ভরতচন্দ্রশীল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে তাদের জবানবন্দিকালে কোন সাংবাদিককে উপস্থিত থাকতে দেওয়া হয়নি। 
জানাগেছে, পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচন্ডি ইউনিয়নে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে মাসিক ভাতাভোগীর আওতায় নতুন ১৮১ জন দুস্থ প্রতিবন্ধি, বয়স্ক ও বিধবা তালিকাভুক্ত হন। এসব তালিকাভুক্তদের গত ২১ নভেম্বর বেলাইচন্ডি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নূরমোহাম্মদ রাজার কৈপুলকি গ্রামের বাড়ীতে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত ১২ মাসের ভাতার টাকা বিতরণ করা হয়। 
ভাতা বিতরণ কার্যক্রম উদ্ধোধন করেন পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরফদার মাহমুদুর রহমান। টাকা বিতরণ করেন সোনালী ব্যাংক হুগলিপাড়া শাখার অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ রাজা, সমাজসেবা অফিসার মোঃ রোকনুজ্জামান মন্ডল ও কর্মচারী ভরতচন্দ্রশীল। 
সূত্র জানায়, প্রতিবন্ধিদের মাসিকভাতা ৫০০টাকা। ১২ মাসে প্রত্যেককে ৬০০০টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু তাদের প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৫০০টাকা করে। বয়স্ক ও বিধবাদের মাসে ৪০০টাকা হিসেবে ১২ মাসে চার হাজার ৮০০টাকা দেওয়ার কথা। তবে তাদের দেওয়া হয়েছে এক হাজার ২০০টাকা করে। এভাবে প্রতিবন্ধি বয়স্ক ও বিধবা ১৮১জন ভাতা ভোগীর মধ্যে ৯ লাখ ৬১ হাজার ২০০টাকা বিতরণের কথা ছিল। তবে তাদের সাকল্যে দেয়া হয়েছে ২লাখ ৪০ হাজার ৩০০টাকা। অবশিষ্ট ৭লাখ ২০ হাজার ৯০০টাকা  ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে আত্মসাত করা হয়েছে বলে ওই সূত্রটি উল্লেখ করেছে। 
এদিকে, বিধবা ও বয়স্কদের ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সম্পর্কে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান জানতে পেয়ে ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরতদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইইএনও তরফদার মাহমুদুর রহমানকে নির্দেশ দেন। এর পর গত শনিবার শুনানি অনুষ্ঠিত হলো। 
এব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা গণশুনানিতে উপস্থিত হননি তাদের বক্তব্যও পরবর্তীতে নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের সামনে রেখে গণশুনানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারাতো কেউ এখানে প্রভাব খাটাননি। 
এদিকে, অসমর্থিত একটি সূত্রে বলা হয়েছে, যারা সমস্ত টাকা পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন, প্রকৃত পক্ষে তারা সমুদয় টাকা পাননি। তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয়েছে। আর যারা গণশুনানিতে হাজির হননি, তাদের সকলকে রাস্তা থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে টাকা ফেরতদানের আশ্বাস দিয়ে। এই সূত্রটি আরও জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মাদ রাজার  কাছ থেকে টাকা ফেরতের মুচলেকা লিখে নেওয়া হয়েছে। 

শেয়ার করুন

0 facebook: