Thursday, January 5, 2017

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি গোপনে নিয়োগ বাণিজ্যে’র অভিযোগ ॥

রাইসুল ইসলাম, পার্বতীপুর (দিনাজপুর)
 
ক্ষতিগ্রস্তদের স্বার্থরক্ষা না করে কর্মকর্তাদের স্বজনদের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে চাকুরী দেবার অভিযোগ উঠেছে। আর এ ঘটনা জানাযানি হলে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ক্ষতিগ্রস্ত এলকাবাসীর মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। 
দিনাজপুরের পার্বতীপুর বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি বাস্তবায়নের ফলে বিপুল সংখ্যক পরিবার ভূমি হারায়। তাদের বাড়িঘর, আবাদী জমি দেবে যায়, ফাটল ধরে। এসব ক্ষতিগ্রস্তদেরকে বহু আন্দোলন সংগ্রামের পর ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের অন্যতম গুরুত্বপূণ দাবী ছিলো তাদের প্রত্যেক পরিবারের সদস্যদের কয়লা কনিতে চাকুরী প্রদান করতে হবে। সম্প্রতি এ দাবী উপেক্ষা করে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর ১৫ জন কর্মচারীকে অস্থায়ী ভিত্তিতে গোপনে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত সোমবার এ নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগে আরো বলা হয়েছে নিয়োগ প্রাপ্তরা সকলে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আওরঙ্গজেব ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের আত্বীয় স্বজন। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ক্ষতিগ্রস্তদের সংগঠন ‘জীবন, পরিবেশ ও সম্পদ রক্ষা কমিটি’র আহব্বায়ক মোঃ মশিউর রহমান বুলবুল জানান, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কর্তৃপক্ষের সাথে ইতিপূর্বে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের বেকার সদস্যদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী প্রদান করার কথা রয়েছে। কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের চাকুরী না দিয়ে বহিরাগতদের চাকুরী প্রদান করছে। তিনি আরও বলেন, কর্মকর্তাদের স্বজনপ্রীতি ও দূনীতি কোনভাবে মেনে নেওয়া হবে না। অবিলম্বে বহিরাগতদের নিয়োগ বাতিল করা না হলে আন্দোলনের মাধ্যমে খনি এলাকার জনজীবন অচল করে দেওয়া হবে। তিনি জানান, এসব দাবী সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। 
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে কর্মসংস্থানের দাবীতে খনি সংলগ্ন ১০/১২টি গ্রামের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। সর্বশেষ গত ২১ নাভেম্বর এলাকায় কয়েক হাজার নারী/পুরুষ চাকুরীসহ অন্যান্য দাবীতে মানববন্ধন ও খনি কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি প্রদান করেন। তবে আন্দোলনকারীদের দাবী দাওয়ার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে কোন প্রকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা ছাড়াই এবং লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষা না নিয়ে সর্বশেষ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ন করা হয়। নিয়োগপ্রাপ্তরা অধিকাংশই ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, মাগুরা, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা। এদের মধ্যে মোঃ সোহেল, পিতা নূরুল ইসলাম উপজেলা চরফ্যাশন, জেলা ভোলা। তাকে অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিকটাত্বীয়। এছাড়া, খায়রুল আলম, পিতা আবু সাঈদ উপজেরা শ্রীপুর, জেলা মাগুরা কেও অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি খনির উপ-ব্যবস্থাপক সাফায়েত আলী মিয়ার ভাই। 
খনির একটি সূত্র জানায়, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ গত সপ্তাহে বদলি হন। নতুন চেয়ারম্যান পেট্রোবাংলার কোম্পানিগুলো সম্পর্কে কিছু বুঝে ওঠার আগেই গত ২ জানুয়ারী এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। সূত্রের দাবি, অতিতে কখনোই পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের অগোচরে কয়লা খনিতে এভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারী অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। 
এব্যপারে জানতে চাইলে খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম নূরুল আওরঙ্গজেব বলেন, এটাকে কোন নিয়োগ বলে না। খনিতে ঘাসকাটাসহ জুরুরী কিছু কাজের জন্য দিন হাজিরা ৪০০ টাকা মজুরীতে ১৪ থেকে ১৬জন লোক নেওয়া হয়েছে। এদের কাজের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ২৭/২৮দিন। তিনি আরও বলেন, অহেতুক ও মনগড়া অভিযোগ করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিয়োজিত মজুরদের মধ্যে তার নিজের কোন আত্মীয় নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শেয়ার করুন

0 facebook: