Saturday, February 11, 2017

ঝিনাইদহের একজন কীর্তিমান মানুষ ড. লুৎফর রহমান

রাজীব মাহমুদ 



দেশের দিকে তাকালে কষ্ট পাই বিদেশের মাটিতে থাকলেও মন পড়ে থাকে দেশে। দেশের মানুষের কথা ভাবলে কষ্ট পান।
স্বাধীনতার পরে যেভাবে দেশটার উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল সেভাবে উন্নয়ন হতে পারেনি। দুর্নীতি আর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বারবার টেনে ধরেছে উন্নয়নের চাকা। এমনটাই মনে করেন তিনি। বলছিলাম একজন সফল মানুষ বাংলাদেশের বিশিষ্ট
বিজ্ঞানী ডঃ লুৎফর রহমানের কথা। নিজের যোগ্যতা, মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে যিনি ছুঁয়েছেন সফলতার সর্বোচ্চ চুড়া। নিজের সফল গবেষণায় যিনি বাংলাদেশের আর একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী ডঃ কুদরত এ ক্ষুদার সাহচর্যে পাটকাঠি থেকে কাগজ আবিস্কারের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। যার সফলতা ভোগ করছে
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব। পূর্বনগর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী নদীতে দুষ্টুমি আর উদ্দামতায় কেটেছে তাঁর শৈশব। একসময় এটি পূর্বপাকিস্তানে থাকলেও
বর্তমানে ভারতের মধ্যে অবস্থিত। ভারতের নদীয়া জেলার রানাঘাট থানার পূর্বনগর
গ্রাম। আর এই গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেছের ডঃ লুৎফর রহমান। নির্ভৃতচারী একজন মানুষ। বর্তমানে বসবাস করছেন আমেরিকাতে। দাদা ছিলেন ওখানকার জমিদার। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে স্বপরিবারে বাংলাদেশে চলে আসেন। তখন
সবে মাত্র ৮বছর বয়স। বিরাট জমিদারি আর সম্পত্তি রেখে ওপার থেকে এপারে চলে আসেন বাবা মো. মাহবুবুর রহমান তরফদার। বজরাপুর গ্রামে গড়ে তোলেন বসতি। যেটি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানায় অবস্থিত। বজরাপুরে এসে প্রথম তিনি খালিশপুর স্কুলে ভর্তি হন পঞ্চম শ্রেণীতে। এরপর এখান থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৫৭সালে কালীগঞ্জ ভুষণ হাইস্কুল থেকে
প্রথম বিভাগে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৫৯ সালে আইএসসি পাশ করেন যশোর এমএম কলেজ থেকে। সেখানেও কৃতিত্বের সাথেই ভাল রেজাল্ট
নিয়ে পাশ করেন। ১৯৬১সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে বিএসসি পাশ করেন। বেশ ভাল মার্ক নিয়ে রসায়নে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি পাশ করেন ১৯৬৩সালে। এমএসসি শেষ করেই মাত্র তিনশ পঞ্চান্ন টাকা বেতনে প্রথম কর্মজীবনে প্রবেশ করেন চিটাগাং কলেজের শিক্ষক হিসেবে। তারপর যোগদান করেন তৎকালীন পাকিস্তান কাউন্সিল অব সাইন্টিফিক এন্ড
ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ(PSIR) বর্তমানে যেটি বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সাইন্টিফিক এন্ড
ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ(BSIR) বা সাইন্সল্যাব নামে পরিচিত । সাহচার্য পান ডঃ কুদরত এ ক্ষুদার মত একজন মহান মানুষের। ডঃ সিদ্দিকুল্লার তত্বাবধানে এখানে এসে রিসার্চ শুরু করেন পাটকাঠি থেকে কাগজের উপরে। সাইন্সল্যাবে কাজ করা অবস্থায় ১৯৬৫ সালে স্কলারশীপ নিযে পিএইচডি করার জন্য জাপানে যান । জাপানের কেইআইও ইউনিভার্সিটি (টোকিও) থেকে পাল্প এন্ড পেপারস এর উপরে পিএইসডি শেষ করেন। এরপর দেশে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পান কিন্তু ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও অনেক কম বেতন হওয়ার কারণে সেই চাকরি করেননি।  সিনিয়র ডেভলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন পাকশী পেপার মিলে। সেসময় দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখেন তিনি। পাকিস্তানের করাচীতে লোভনীয় চাকরি পেলেও তিনি তা প্রত্যাখান করেন। ১৯৭১সালের জানুয়ারিতে তিনি বিয়ে করেন এরপর চাকরির কারনেই স্বপরিবারে চলে যান দেশের বাহিরে। ওখানে বসেই
জানতে পারেন পাকিস্তানিদের নৃশংসতার কথা। এরপর দেশ স্বাধীন হয়। মন
পড়ে থাকে দেশের মাটিতেই কিন্তু চাকরির কারনেই বিদেশেই থেকে যান উনি।এরপর একে একে সাইন্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন জাপান, কানাডা এবং আমেরিকার বিখ্যাত সব পেপার কোম্পানীতে।যার মধ্যে এবিআইটিআইবিআই প্রাইচ পেপার কোম্পানী, চ্যাম্পিয়ন ইন্টারন্যাশনাল পেপার কোম্পানী এবং বিশ্ববিখ্যাত পেপার কোম্পানী কোডাকে। ২০০৭সালে অবসর নেন কর্মজীবন
থেকে। নিজের শিক্ষা আর কর্মের অভিজ্ঞতা দিয়ে তৈরি করেছেন ২৪টি পাবলিকেশন্স আর প্যাটার্ন। তার সহধর্মীনী নাফিসা রহমান কানাডার টরেন্টো ব্যাংকে নিউইয়র্কের ডয়েস ব্যাংকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বর্তমানে দুজনেই অবসর জীবন যাপন করছেন আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে। দুই ছেলে আর এক মেয়ের একজন সফল বাবা তিনি। তিনজনই ডাক্তার। তার তিন
সন্তানই আমেরিকাতে কর্মরত। দেশ খুব টানলেও দেশে একেবারে চলে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানালেন তিনি। তবে দেশের মানুষে জন্য
কাজ করতে চান তিনি। ভাবেন দেশের কথা। দেশ ভাগ হলেও নিজের জন্মভূমি পূর্বনগরকে এখনও ভুলে যাননি তিনি। যথেষ্ঠ পরিমান সহযোগিতা করেন
গ্রামের মানুষকে। ভুলে যাননি বাংলাদেশের সেই গ্রামকে, যে গ্রাম তাকে প্রথম আশ্রয় দিয়েছিল। যেখানকার মাটিতে ঘুমিয়ে আছেন তার বাবা মা, সেই বজরাপুর গ্রামকে। প্রতি বছর আসতে না পারলে দুবছর পর হলেও একবার এসে ঘুরে যান এই বজরাপুরে। যতটা পারেন গ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শোনেন। সহযোগীতা করেন গ্রামের মানুষকে। সফল এই মানুষটির ব্যর্থতার কোনো গল্প নেই। কিন্তু কষ্ট পান নিজের দেশের দিকে তাকালে। তিনি মনে করেন রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন রোধ করা গেলে এবং দেশ থেকে দুর্নীতিরোধ করা গেলে বাংলাদেশও
উন্নত দেশের কাতারে গিয়ে দাঁড়াবে খুব শীঘ্রই। ক্লাশে শিক্ষকদের আদরের ছাত্রপুত্র
ছিলেন তিনি। মানুষের উপকার করাটাকেই স্বার্থকতা বলেমনে করেন শিক্ষকদের এই আদরের ছাত্রপুত্র। তাই মানুষকে উপকার করে যান তিনি। তবে সেটা
মোটেও প্রচার করার পক্ষে নন তিনি। বর্তমানে যারা বিভিন্ন বিষয়
নিয়ে পড়াশোনা করেন গবেষণা করেন তাদেরকে একাগ্রতা নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে বললেন ।সততা, একগ্রতা আর পরিশ্রম থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব না বলেই মনে করেন তিনি। তার মতে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সোজা রাস্তা দিয়ে যেতে না পারলে প্রয়োজনে একটু ঘুরে যেতে হবে। তবে গন্তেব্যে পৌঁছনটাই যেন
লক্ষ থাকে ।

সূত্র: http://www.bdpress.net

শেয়ার করুন

0 facebook: