সোলাইমান খোকার একাল সেকাল
শারমিন ইসলাম
সোলাইমান খোকা ।
আপন আলোয় উদ্ভাসিত একজন প্রকৃতি প্রেমি মানুষ । যিনি একাধারে মঞ্ছ,বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে কাজ করছেন । অভিনয়, প্রযোজনা ও পরিচালনায় সমান তালে এগিয়ে চলছেন । বাংলাদেশ বেতারে বর্তমানে তাঁর লেখা “আমাদের সাতকাহন” পরিবেশিত হচ্ছে । টেলিভিশনেও তাঁর অভিনীত সাপ্তাহিক, ধারাবাহিক নাটক ও টেলিফিল্ম প্রচারিত হচ্ছে । বিবিসি বাংলার একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজ করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন ।
অত্যন্ত বিনয়ি,সদালাপী ও প্রচার বিমুখ মানুষটির সাথে সেল ফোনে
কথা হয় কাল। পরিচয় দিয়ে কথা বলতে সাক্ষাতের অনুমতি মেলে সকাল ১০ টায় ।যথারীতি ইস্কাটনের বাসায় পৌঁছে ফোন দিতেই মিনিট পাঁচেক পরে নীচে চলে আসেন তিনি । সাদা পাঞ্জাবীতে চিরাচরিত মিষ্টি হাসিতে তাঁর বাসায় নিলেন । সেখানে পরিচয় করে দেন
মিসেস সোলেয়মান এর সাথে ।
সোলাইমান খোকা নরসিংদীর বেলাবোর সন্তান হলেও মুলত তিনি বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে । সেখানে সে সময়
স্কুল ও কলেজ গুলোতে নিয়মিত নাটক মঞ্ছস্থিত হতো ।তাঁর অভিনয়ে
সম্পৃক্ততা ১৯৬৩ সালে মাত্র
১৩ বছর বয়সে মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে । স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে কল্লোল নাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক ছিলেন তিনি । তারও দশ বছর
পরে গড়ে তোলেন শাশ্বত ললিতকলা একাডেমী । সোলেয়মান খোকার রচিত ও নির্দেশিত “রক্তের বিনিময়” নাটকটি এখন পর্যন্ত আশি বার মঞ্চস্থ হয়েছে । ১৯৬৭ সালে কলেজে “ বৌদির বিয়ে ” মঞ্চ নাটক টির মঞ্চায়নের মাধ্যমে তাঁর পরিচালনা জীবনের শুরু । এই নাটকটির অনন্য দিগ হচ্ছে – এই নাটকে তিনি পরিচালনা , অভিনয় ও মেকাপ পর্যন্তও নিজেই করেন ।
বাংলাদেশ বেতারে যুক্ত
হন ১৯৭২ সালের নভেম্বরে “আলী বাবা” নাটকের মধ্য দিয়ে । বর্তমানে তাঁর লেখা আমাদের “সাতকাহন” প্রতি মঙ্গলবার ৮টা ১০মিনিটে সারা দেশ ব্যাপী সকল বেতার কেন্দ্র থেকে এক যোগে প্রচারিত হচ্ছে । নাটকটি প্রযোজনা করেছে জনসংখ্যা,স্বাস্হ্য্ ও পুষ্টি সেল। বাংলাদেশ বেতারের বহুল স্রোতা প্রিয় অনুষ্ঠান “দর্পণ” এবং “প্রসন্নচ্ছটা” অনুষ্ঠানটি টানা দশ বছর তিনি করেন । যারা বেতার নাটকে আসতে চান তাদের কাছে সোলাইমান খোকার পরামর্শ –বেতার নাটক অন্যান্য মিডিয়া থেকে সম্পূর্ণ আলাদা । কারন বেতার নাটকে চরিত্র রূপায়িত হয় কণ্ঠের কারুকাজের মাধ্যমে। তাই যারা বেতার নাটকে আসতে চান তাদের অবশ্যই শুদ্ধ উচ্চারণ জানতে হবে সেটা প্রমিত হোক আর আঞ্চলিক উচ্চারণ হোক ।বাংলাদেশ বেতারে তাঁর পরিবেশিত নাটক গুলির মধ্যে অন্যরকম আনন্দ ,সুখ –দুঃখ ভালোবাসা অন্যতম ।
টেলিভিশনে সোলেয়মান খোকার প্রথম নাটক আমাদের গল্প । সোলেয়মান খোকা অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করে দর্শক প্রিয়তা পেয়েছেন । টিভিতে তাঁর অভিনীত নাটক গুলোর মধ্যে ধন্যবাদের অন্যবাদ , পাশাপাশি , পরিণামে পরিণয় , সংসার সুখের হয় বেদনার গুনে , সার কথার ধার বেশি ও ভালোবাসা প্রেম নয় উল্লেখযোগ্য । তিনি টিভি নাটক ছাড়াও বিভিন্ন টেলিফিল্ম ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন । তাঁর মধ্যে উচ্চতর হিসাব বিজ্ঞান,বড়ভাই ও বর্ষা উল্লেখ্য ।
ইত্যাদি , আনন্দমেলা ও পাঁচ ফোড়ন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে দর্শকের মনে দাগ কেটেছেন । বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক আসলেও যেতে পারেন না তিনি লেখালেখির কারণে । তিনি মঞ্চ , বেতার , টিভি ও চলচ্চিত্র সব মাধ্যমে কাজ করে সফল হয়েছেন । তবে বেতারে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন । পারিবারিক জীবনেও সফল অভিনেতা, নাট্যকার ও কথা শিল্পী সোলাইমান খোকা । এক ছেলে ও এক মেয়ে দুজনে আজ নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত । ছেলে পান্থ শাহরিয়ার প্রথম সারির নাট্যকার । বহুল আলোচিত মেগা সিরিয়াল বন্ধনের নাট্যকার । তিনি পড়ালেখা করেছেন ম্যানেজমেন্টে। বিষয়টিতে স্নাতকোত্তর করলেও নাটক ঘিরেই তার পেশা। মেয়ে নৃত্যশিল্পী স্নাতা শাহরিন। একসময় অভিনয় করেছেন আফসানা মিমির নির্দেশনায় ‘গৃহ গল্প’, ‘সাড়ে তিনতলা’ ইত্যাদি ধারাবাহিক নাটকে। কিন্তু মন ও মননে একজন নৃত্য শিল্পী। তাই অভিনয় ছেড়ে বর্তমানে পুরোপুরি নাচে সময় দিচ্ছেন। নাচ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারেন না তিনি ।জামাতা শতাব্দী ওয়াদুদ হলেন একজন বাংলাদেশী নাট্য ও চলচ্চিত্র অভিনেতা ।
খবর বিভাগঃ
মুখোমুখি
0 facebook: