Tuesday, October 10, 2017

পার্বতীপুর রেলজংশন স্টেশন



পার্বতীপুর রেলজংশন স্টেশন

এক অঙ্গে দুইরুপ॥ এক পাশে রাজকীয়অন্য পাশে চলে  মফিজ ট্রে

রাইসুল ইসলাম, পার্বতীপুর (দিনাজপুর)

পার্বতীপুর রেলজংশন স্টেশন। একসময় এ স্টেশন দেখার জন্য ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন আসতেন। তারা 
স্টেশনের মূল ভবন বা  অপারেশনাল বিল্ডিং ঘুরে ঘুরে দেখতেন। দেখতেন মুগ্ধ হয়ে কিভাবে তার বার্তার সাহায্যে সংবাদ আদান প্রদান করা হতো, কিভাবে সংকেত পাঠিয়ে লাইন ক্লিয়ার দিয়ে ট্রেন আনা নেওয়া করা হতো। পুরো রেল স্টেশনে তখন চলতো লংকাকান্ড। দেখা যেত ওভার  ব্রিজে দাড়িয়ে ইয়ার্ডে অবস্থিত শত শত মালবাহী বগি, যাত্রীবাহী কোচ। আরও দেখা যেত স্টেশনে প্রবেশকালীন ট্রেন, লাল শার্ট পরিহিত কুলিদের দৌড়ঝাপ। মানুষ স্টেশনের নানা স্থাপনা, যাত্রী ওঠানামা সব দেখে বাড়ি ফিরে গিয়ে স্বজন প্রিয়জন আর পরিচিতজনদের কাছে সে সব মন খুলে বলতেন।
ঐতিহ্যবাহী পার্বতীপুর রেল স্টেশনটি স্থাপিত হয় বৃটিশ আমলে, ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে। ১৩৯ বছর আগের এ জংশন রেল স্টেশনে আছে ৫টি প্লাটফরম। এর মধ্যে ১ ও ২নং প্লাটফরমের মাঝে আছে ৩টি রেললাইন। ৩টিই ব্রডগেজ রেললাইন। সম্প্রতি এর একটি রেল লাইনকে ডুয়েল গেজে রুপান্তর করা হয়েছে। এ ৩টি রেললাইনে চিলাহাটি-পার্বতীপুর-রাজশাহী, চিলাহাটি-পার্বতীপুর-খুলনা, চিলাহাটি-পার্বতীপুর-ঢাকা ও দিনাজপুর-পার্বতীপুর-ঢাকার মধ্যে যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেনগুলো চলাচল করে থাকে। এর মধ্যে পার্বতীপুর-রাজশাহীর মাঝে চলাচল করে আন্তঃনগর তিতুমীর ও আন্তঃনগর বরেন্দ্র এক্সপ্রেস নামের দু’টি ট্রেন। চিলাহাটি-পার্বতীপুর-খুলনার মধ্যে যাতায়াত করে আন্তঃনগর সীমান্ত ও আন্তঃনগর রুপসা এক্সপ্রেস ট্রেন। চিলাহাটি-পার্বতীপুর ও ঢাকার মধ্যে চলাচল করে আন্তঃনগর নীল সাগর ট্রেন। আর দিনাজপুর-পার্বতীপুর ও ঢাকার মধ্যে চলাচল করে আন্তঃনগর একতা ও দ্রুতযান ট্রেন। আন্তঃনগর এ ট্রেনগুলোর মধ্যে দ্রুতযান, একতা ও নীলসাগর ট্রেনের কোচ সর্বশেষ সংস্করন লাল সবুজের। রুপসা ও সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেন দ্বিতীয় সংস্করনের কোচ, সাদার মাঝে লাল বর্ডার দেওয়া। বরেন্দ্র ও তিতুমীর এ দু’টি ট্রেন প্রথম সংস্করনের। আন্তঃনগর এ ট্রেনগুলো বাদে আরও কয়েকটি ট্রেন চলাচল করে ব্রডগেজ রেলপথে। এর মধ্যে ২৩ আপ ও ২৪ ডাউন রকেট মেইল দু’টি চলে পার্বতীপুর-খুলনার মাঝে। ৩১আপ ও ৩২ ডাউন নামে উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চলে পার্বতীপুর-রাজশাহীর মধ্যে। উল্লেখিত ট্রেনগুলো সাবেকী কচুপাতা রংয়ের। এছাড়াও পার্বতীপুর-চিলাহাটি রেল পথে মিশ্র ট্রেন চলে।
অন্যদিকে, পার্বতীপুর রেলজংশনের ৩,৪, ও ৫ নং প্লাটফরম সংলগ্ন মিটারগেজ রেল পথে যে ট্রেনগুলো চলাচল করে তার মধ্যে েেদালনচাপা নামের আন্তঃনগর ট্রেনের কোচগুলো প্রথম সংস্করনের। এ ট্রেনটি চলে দিনাজপুর-পার্বতীপুর-কাউনিয়া সান্তাহার রেলস্টেশনের মধ্যে। পার্বতীপুর-লালমনিরহাট এবং পার্বতীপুর-ঠাকুরগায়ের মধ্যে ডেমু নামে দু’টি ট্রেন চলাচল করে। এ দু’টি ট্রেনকে স্থানীয়রা খেলনা ট্রেনের সাথে তুলনা করেন বলেন, কোন গাছের গুড়ির সাথে ধাক্কা লাগলে এর কোচগুলো দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। উপরে উল্লেখিত ট্রেনগুলোর বাইরে পার্বতীপুর-তিস্তা-কুড়িগ্রাম-রমনা বাজার, পার্বতীপুর-রংপুর-লালমনিরহাট, বিরল-পার্বতীপুর-লালমনিরহাট-বুড়িমারী, পার্বতীপুর-কাউনিয়া গাইবান্ধা-বগুড়া সান্তাহার এবং পার্বতীপুর-ঠাকুরগা-পঞ্চগড় মধ্যে চলাচলকারী মেইল ও লোকাল ট্রেনের রং সাবেকী আমলের কচুপাতা রংয়ের। এসব ট্রেনের অধিকাংশের আয়ু বহু আগে শেষ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এসব ট্রেনের যারা যাত্রী তাদের কাছে ট্রেনগুলোর কমন নাম হলো মফিজ ট্রেন। 
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন পার্বতীপুরের তোজাম্মেল হোসেন। তিনি আইনজীবি ওমর ফারুকের সহকারী। তোজা মুহরি নামে সবাই তাকে চেনে। পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুরে সপ্তাহের ৫দিন যাতায়াত করেন। বলেন, পার্বতীপুর রেলস্টেশনে দুই অথবা তিন নং প্লাটফরমে দাড়িয়ে দেখতে পাই বৈষম্যের চিত্র। একদিকে চলে রাজকীয় সব ট্রেন। অন্যদিকে, সাবেকী আমলের ধুলিধূসর পড়া আয়ু শেষ হওয়া লক্কর ঝক্কড় মার্কা সব ট্রেন। 
পার্বতীপুর রেল জংশনে কর্মরত এমজি ক্যারেজ স্টাফরা বলেন, প্রতিটি ট্রেনের আয়ু অনেক আগে শেষ হয়েছে। এগুলো নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষা বা চেকিং ছাড়া চালানো যায়না। ব্রডগেজ লাইনের ক্যারেজ স্টাফরা বলেন, নতুন কোচের গাড়ীগুলো চেকিংয়ে কম সময় লাগে। তবে প্রতি সপ্তাহের বন্ধের দিনগুলোতে এগুলো ভাল করে পরীক্ষা করা হয় বলে তারা উল্লেখ করেন। ট্রেনের বৈষম্য সম্পর্কে জানতে চাইলে পার্বতীপুরে কর্মরত স্টেশন মাষ্টার কোন রকম মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শেয়ার করুন

0 facebook: