Tuesday, January 9, 2018

সুবিধা বঞ্চিত ও চরম বৈষম্যের শিকার রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী

সুবিধা বঞ্চিত ও চরম বৈষম্যের শিকার রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী

এম এ আলম বাবলু 


দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম রেলওয়ে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় রেলওয়ে এখন একটি জনপ্রিয় গণমাধ্যম। সহজতর ও নিরাপদ হওয়ায় এখনও মানুষ রেলওয়েতে ভ্রমন করতে সব চেয়ে বেশী সাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকে। বর্তমান সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কণ্যা জননেএী শেখ হাসিনা রেলওয়েকে আরো গতিশীল করতে রেলওয়ে মন্ত্রনালয় গঠন করা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন মূলক পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। ইতোমধ্যেই য়ার সুফল বইতে শুরু করেছে। রেলওয়ের বিভিন্ন অঙ্গনে আধুনিকতার ছাপ পড়লেও সুবিধা বঞ্চিত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী। এই বাহিনীর পুর্বসূরীর নামকরন হয়েছিল “ওয়াচ এন্ড ওয়ার্ড”নামে সেই ১৮৮২ সালে। ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে ওয়াচ এন্ড ওয়ার্ডের সদস্যরা সরাসরি অংশ নেয়। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে। দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার পরে ১৯৭৬ সালে এক অধ্যাদেশ জারীর মাধ্যমে “ওয়াচ এন্ড ওয়ার্ড” বিলুপ্ত কর্ েরেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী গঠিত হয়। রেলওয়ে সম্পদ রক্ষনা-বেক্ষনের দায়িত্বে নিয়োজিত এই বাহিনীকে ১৯৭৯ সালে অন্য আরো একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে সারা দেশে ২০ টি চৌকির সহায়তায় রেলওয়ের অস্থাবর সম্পত্তি অবৈধ ভাবে দখলে রাখা ব্যক্তি বা সন্দেহ ভাজন ব্যক্তিকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার, চৌকিতে মামলা রুজু ,মামলার তদন্ত ও আদালতে উক্ত মামলা পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করা হয়। পরবর্তীতে এই বাহিনীর পুনর্গঠন, ক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রয়োগের জন্য ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশ কিংবা পরোয়ানা ছাড়াই রেলওয়ের সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করতে পারে  সন্দেহ ভাজন এমন যে কাউকে তল্লাসী কিংবা গ্রেফতার করতে পারবে এমন বিধান রেখে সরকারের রেলপথ মন্ত্রী মো: মুজিবুল হক “রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বিলÑ২০১৬” মহান জাতীয় সংসদে উত্থাপন করলে তা সংসদে পাস হয় ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারী । যার ফলে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী অধ্যাদেশ ১৯৭৬ রহিত করে রেলওয়ে সম্পত্তি রক্ষনা-বেক্ষন,নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য “রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন ২০১৬” পাস হয় এবং গেজেট প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া “রেলওয়ে সম্পত্তি অবৈধ দখল অধ্যাদেশ-১৯৭৯” রহিত করে “রেলওয়ে সম্পত্তি অবৈধ দখল আইন-২০১৬” পাস হয় এবং গেজেট প্রকাশিত হয়। যাতে দেখা যায় বাহিনীর সদস্যগন রেলওয়ের সম্পত্তি চুরি,অবৈধ দখলকারীদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার, মামলা রুজু ও আসামী আদালতে চালান করতে পারবে। প্রয়োজনে তল্লাসী ও অস্ত্র-গোলাবারুদ বহন ও ব্যবহার করতে পারবে। রেলওয়ে স্টেশন, প্লাটফর্ম,ইয়ার্ড ও ট্রেন এবং যাএী সাধারন কর্তৃক বহুল ব্যবহৃত হয় এমন এলাকা উক্ত বাহিনীর অন্তভূক্ত হবে। এ ছাড়া ক্ষেত্র মতে,আইন প্রয়োগকারী অন্যান্য শৃঙ্খলা বাহিনী ,সংস্থা এবং প্রসাশনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে পারবে। এই আইনের ্আওতায় বাহিনীর কোন সদস্য অসদাচরণ , শৃঙ্খলা ভঙ্গ ,দুর্নীতিসহ অন্যান্য অপরাধ করলে এবং তা প্রমানিত হলে এই আইনে তাকে বরখাস্ত,অপসারণ,বাধ্যতামূলক অপসারণসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বাক স্বাধীনতা,সংগঠন প্রতিষ্ঠা,কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহন,দন্ড প্রদানসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে বিশেষ বিধান করা হয়েছে।


গেজেটগুলো পর্যালোচনা করে আরো দেখা যায়,রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী রাষ্ট্রিয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১৫২ অনুসারে শৃঙ্খলা বাহিনী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সেই অর্থে এটি একটি শৃঙ্খলা বাহিনী । কিন্তু শৃঙ্খলা বাহিনী হলেও অন্যান্য বাহিনীর মতো অদ্যাবধিও তাদের দেওয়া হয়নি কোন রেশন,ঝুঁকিভাতা ,যানবাহনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। এ ছাড়া বেতন বৈষম্য তো আছেই। তাছাড়াও এই বাহিনীতে প্রথম,তৃতীয় ও চতুথ শ্রেনীর পদ থাকলেও সৃষ্টি করা হয়নি দ্বিতীয় শ্রেনীর কোন পদ। এই বাহিনীর সহকারী কমান্ডেন্ট থেকে চীফ কমান্ডেন্ট পর্যন্ত পদগুলো প্রথম শ্রেনীর অথচ ইন্সপেক্টর,চীফ ইন্সপেক্টর ও সাব ইন্সপেক্টর সবাই তৃতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা। সিপাহীগন চতুর্থ শ্রেনীর। লক্ষনীয়, দ্বিতীয় শ্রেনীর কোন পদ নেই। কর্মকর্তা হলেও তারা তৃতীয় শ্রেনীর হাবিলদার/নায়েক সমতুল্য। অথচ যারা তাদের অধীনে কর্মরত । ফলে এই বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ। এই বাহিনীতে  বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার সদস্য কর্মরত রয়েছে।


 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি নির্ভরশীল সূএ থেকে জানা গেছে,বর্তমানে এই বাহিনীতে প্রায় ৩ হাজার সদস্য কর্মরত থাকলেও কাজের পরিধী ও দায়িত্ব বাড়ায় সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুন করা এবং সেই সাথে রিজার্ভ ফোর্স থাকা প্রয়োজন। বাহিনীর একজন কমান্ডেন্ট পোষাক ভাতা পান বছরে মাএ ১২শ’ টাকা এবং চীফ ইন্সপেক্টর পান ৯শ’টাকা। রেলওয়ের ২ অঞ্চলে ২ জন চীফ কমান্ডেন্ট পদায়ন করা হলেও তাঁরা মূলত চীফ পদ মর্যাদার কর্মকর্তা নয় বলে সংশ্লিষ্ট সূএ থেকে জানা যায়। এই বাহিনীর সদস্যরা ঝুঁকিপূর্ন কাজ করতে গিয়ে জীবন দান করলেও আজও তারা ঝুঁকি ভাতা পাচ্ছেন না । তাদের দাবী অন্য সব বাহিনীর মতো বেতন বৈষম্য ও বাহিনীর অভ্যন্তরীন সব সমস্যার সমাধানসহ রেশন এবং ঝুঁকি ভাতা প্রদান করতে হবে।




শেয়ার করুন

0 facebook: