৫০ কোটি টাকার বাড়তি বই বিক্রির টার্গেট
পার্বতীপুর সহ বৃহৎ রংপুর দিনাজপুরে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ে সয়লাব, অভিভাবকরা অসহায়
মনজুরুল আলম
বৃহৎ রংপুর দিনাজপুরের ৮ জেলার লাইব্রেরী গুলোতে নিষিদ্ধ ঘোষিত গাইড বইয়ে সয়লাব। সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হলেও এখন প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে গাইড বই। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে অসহায় অভিভাবক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন বছরের শুরুর আগে থেকে গাইড বই ব্যবসায়ীরা চাহিদা মত গাইড বই ছাপিয়ে নেয়। তন্মধ্যে পাঞ্জেরী, লেকচার, অনুপম, জুপিটার, চমক প্রকাশনীর নাম উল্লেখযোগ্য। এরপর ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বিদ্যালয়ে তাদের দেয়া গাইড বই সহ বিভিন্ন বইয়ের তালিকা ও বইয়ের নমুনা সরবরাহ করেন। এর আগে ব্যবসায়ীরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সাথে মোটা টাকার বিনিময়ে তাদের বই চালানোর জন্য চুক্তি করে। চুক্তি মোতাবেক নতুন বছরে নতুন শ্রেনীতে ভর্তি হওয়া কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের নিকট বইয়ের তালিকা দিয়ে শিক্ষকগন বলেন, এই লাইব্রেরীতে গিয়ে এ তালিকা দিলেই বই দিয়ে দিবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সেই তালিকা মোতাবেক তাদের অভিভাবকদের কে বই কিনতে বাধ্য করে। একই ভাবে নোট বই ও ব্যাকরণ বইও কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এসব তালিকা অনুযায়ী বই কিনতে গিয়ে অভিভাবকগন হিমশিম খাচ্ছেন। সাহিত্য বইগুলো সরকার কর্তৃক বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের নিকট দেয়া হলেও শিক্ষকদের প্ররোচনায় শিক্ষার্থীরা গাইড বইয়ের দিকে ঝুকে পড়েছে। আর এখন এসব গাইড বই কিনতে হাজার হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে অভিভাবদের কে। দেখা গেছে নবম শ্রেনীর একসেট গাইড বইয়ের মূল্য তিন হাজার টাকা, অষ্টম শ্রেনীর আড়াই হাজার টাকা, সপ্তম শ্রেণীর এক হাজার আট শত টাকা, ষষ্ট শ্রেণীর এক হাজার দুই শত টাকা। এখন প্রথম শ্রেনী থেকে ডিগ্রী পর্যন্ত গাইড বইয়ের ব্যবহার শুরু হওয়ায় অভিভাবকগন আরো ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, অবশ্যই গাইড বই বিক্রি নিষিদ্ধ। সকলে এগিয়ে এলে গাইড বই বন্ধ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি পার্বতীপুর উপজেলা শাখার সভাপতি আবু এহিয়া কুসুম বলেন, আমি বরাবরই গাইড বইয়ের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীরা সাহিত্য বই পড়লে কোন গাইড বইয়ের প্রয়োজন হয় না। তবে বিষয় স্কুলের ভিত্তিক শিক্ষকরা গাইড বইয়ের ব্যাপারে বলতে পারবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রটি জানায়, গত বছরের অবিক্রিত গাইড বইয়ের উপরের কভার ছিড়ে ফেলে নতুন বছরের কথিত পাবলিকেশন্স এর নামে উইনার পেজ (উপরের কভার) লাগিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু গ্রামার, নোট ও গাইড বইয়ের কোন রেজিষ্ট্রেশন হয় না। সূত্রটি আরো জানায়, এ সব গাইড বই ঢাকার বাংলাবাজার থেকে ৫-১০ টাকা কেজি দরে কিনে এনে কভার পাল্টিয়ে তা ৫০০-১০০০ টাকায় বিক্রি করছে। পার্বতীপুরের জনৈক পুস্তক ব্যবসায়ী উত্তরের ৮ জেলায় দিব্যি এ ব্যবসা চালাচ্ছে। যা সকলের জানা। সূত্রমতে এবারে গ্রামার, নোট, গাইড ও কিন্ডার গার্টেন (কেজি) স্কুল সমূহে ৫০ কোটি টাকার বাড়তি বই বিক্রির টার্গেট নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কাজে নেমেছেন। কেজি স্কুলে শিশু শ্রেণী, প্লে শ্রেণী, নার্সারী শ্রেণী, কেজি-১ শ্রেণী, কেজি-২ শ্রেণী, স্ট্যান্ডার্ড-১ শ্রেণী, স্ট্যান্ডার্ড-২ শ্রেণী ও পঞ্চম শ্রেণী মানের স্ট্যান্ডার্ড-৩ শ্রেণী রয়েছে। বাড়তি বইয়ের মধ্যে রয়েছে ছবি আকাঁ, সাধারন জ্ঞান, পরিবেশ পরিচিতি, বাংলা ব্যাকারন, ইংরেজী গ্রামার, ওয়ার্ড বুক ইত্যাদি। লাইব্রেবীর মালিকরা লাইব্রেরী ছাড়াও অতিরিক্ত গুদামে এসব বই মজুদ রেখে দেদারছে বিক্রি করছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এবারে “ নর্থ বেঙ্গল কিন্ডার গার্টেন এন্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুল সোসাইটি” নামে নতুন সংযোজন করা এ সোসাইটির মাধ্যমে কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোতে কর্তৃপক্ষ নিজেরাই বই বিক্রি করছে এবং বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা সন্তানদের জন্য কিনছেন। সোসাইটির মাধ্যমে বাড়তি বইগুলোর মধ্যে শুধু প্রথম শ্রেণীর বইয়ের মূল্য ছয় শত টাকা। নর্থ বেঙ্গল কিন্ডার গার্টেন এন্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুল সোসাইটির গভঃ রেজি. নংÑ রাজ-এস-১০৪ এবং প্রধান কার্যালয় ধাপ ক্যান্ট রোড রংপুর।
খবর বিভাগঃ
অর্থনীতি
সারাদেশ
হামার পার্বতীপুর
0 facebook: