Tuesday, January 9, 2018

অবৈধ প্রথা ঘুষের মধ্যে এখন দূনীতি

অবৈধ প্রথা ঘুষের মধ্যে এখন দুর্নীতি

------------- মোহাম্মদ শামসুল হুদা-------------


বর্তমানে বাংলাদেশের জনগনের নিকট ঘুষ একটি বহুল পরিচিত শব্দ। ঘুষ একটি সামাজিক ব্যধি। আমাদের সমাজ ব্যবস্থার রন্ধে রন্ধে ঢুকে পড়েছে এ সর্বনাশা অসুখ। ক্রমেই সমাজ ব্যবস্থা থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে মানবতা। আজকাল যে দিকে তাকান, সেদিকে এগোন কেবলই ঘুষ চোখে পড়ে- নজরে আসে। ঘুষের উৎপত্তি সম্পর্কে জানা যায় দেব-দেবীর কাহিনী পড়লে দেবতাদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, মনুষ্য কর্তৃক নানা রকম উপঢৌকন বা ঘুষ প্রদানের ঘটনা দেখা যায়। ফল-মূল, অস্ত্র, শস্য, নারী থেকে আরম্ভ করে কি না ছিল সেই উপঢৌকনের তালিকায়। এই উপমহাদেশে ঘুষের ব্যাপক প্রসার ঘটে বিদেশী শক্তি সমূহ এই অঞ্চলের শাসন ক্ষমতা গ্রহনের পর। ঘুষ শুধু উপর থেকে নিচেই বি¯তৃত হয়নি। নিচ থেকে বি¯তৃত হয়েছে উপরেও। বৃটিশ আমলে ঘুষ প্রতিষ্ঠানকতা পায়। এই আমলে জনগনের কল্যানের নামে প্রনীত হয় নানাবিধ আইন। ভূমি রাজস্ব আদায় উন্নয়ন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, বিচার কার্য ইত্যাদির সাথে সাথে ইংরেজ রাজ পুরুষদের ব্যক্তিগত উচ্চভিলাসের পথ পরিক্রমায় ঘুষের পরিধি বি¯তৃত হতে থাকে।


ঘুষ হচ্ছে অনেকটা প্রেমের মত। প্রেম নামক অমিত শক্তি যেমন প্রেমিক-প্রেমিকাকে দূর্বার গতিতে টানে-ঘুষ নামক যাদুকরী শক্তি এককভাবে কাছে টানে- ঘুষদাতা এবং ঘুষখোরকে। প্রেমিক প্রেমিকা কেন একজন আরেক জনের প্রতি আকৃষ্ট হয় তার সঠিক কারন যেমন বলা যায় না, তেমনি ঘুষ দাতা ও ঘুষখোরের পরস্পরের আকর্ষনের সুনির্দিষ্ট কারন বর্ণনা করা অসম্ভব। ঘুষের সংজ্ঞায় বলতে হয়- কোন ক্ষমতাধর ব্যক্তির কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা গ্রহনের জন্য যে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয় তাই হচ্ছে উৎকোচ বা ঘুষ। ঘুষ কখনো দিতে বাধ্য করা হয়, আবার কখনো নিজস্ব প্রয়োজনেই দেয়া হয়।
ঘুষ গ্রহন-প্রদান এখন মাল্টি পারপাস বিষয়ে পরিনত হয়েছে। ক্ষেত্রভেদে এর নাম হয়েছে ভিন্ন। কেউ এর মাধ্যমে ‘টুপাইস’ কামিয়ে নেন, কেউ ‘মাল’ ছাড়েন। কেউ গ্রহন বা প্রদান করেন ‘নগদ নারায়ন’ কেউবা অন্যের পকেটে হাতড়ে ‘মাইকেল’ ছিনিয়ে নেন। বিনাশ্রমে পাওয়া যায় বলে অনেকে এটাকে বলেন ‘ফাউ’। অতিরিক্ত ইনকাম বলে অনেকে একে বলেন ‘উপরি’। এরকম অসংখ্য মধুর নাম ও সম্বোধন ভূষিত ঘুষ আমাদের সমাজে মহা সমাদরে টিকে আছে। আরো অনেক পরিচিত না জানা যায়। ‘নজর আনা, সেলামী, পণ/যৌতক, উপঢৌকন/গিফ্ট, কন্ট্রাক্ট, পার্সেন্টেজ, বক্শিস, ডোনেশন, ব্রাইব, রাসুন, চা-নাস্তার খরচ, স্পীড মানি ইত্যাদি। নিয়োগ বানিজ্যের সাথে অনুরূপ অনেক বানিজ্য যুক্ত হয়েছে। সিট বানিজ্য, ভর্তি বানিজ্য, ফুটপাত বানিজ্য, টার্মিনাল বানিজ্য, ইজারা  বানিজ্য, টেন্ডর বানিজ্য, তদবীর বানিজ্য ইত্যাদি থেকে শুরু করে দলে পদায়ন বানিজ্য, নির্বাচনে মনোয়ন বানিজ্য ইত্যাদি আজ সমাজের রন্ধে রন্ধে জেকে বসেছে। 


বর্তমানে নগদ অর্থই ঘুষের উপকরন হিসেবে ব্যক্তি ও কাজের ধরন ভেদে ঘুষ আদান-প্রদান করা হয়। ঘুষ হিসেবে ব্যবহৃত সামগ্রী তালিকায় সোনা-দানা, বাড়ী-গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, ভিসিআর, ক্যাসেট, রেকর্ডার, মোবাইল সেট, সহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক জিনিষপত্র, শাড়ি-গহনা, বই-কলম, জুতা-ছাতা, ফার্নিচার, মিষ্টি, গরু, ছাগল, ভেড়া, মুরগী, সিগারেট, বড় মাছ, ফল-মুল, বিমানের টিকিট, নাটক-সিনেমার টিকিট, ডায়েরী, ক্যালেন্ডার, মদ, নারী ছাড়াও আরো অনেক কিছুই রয়েছে। ঘুষ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তবে বস্তুগত ভাবে ঘুষকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। এগুলো হচ্ছে- (১) অর্থনৈতিক ঘুষ, (২) সম্পত্তি বিষয়ক ঘুষ। অর্থনৈতিক ঘুষ বলতে সাধারনত অর্থ-কড়ি, টাকা-পয়সা অর্থাৎ নগদ লেন-দেন যোগ্য ঘুষকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। আর টাকা-পয়সা বাইরে যে ঘুষ দেয়া হয় তাই সম্পত্তি বিষয়ক ঘুষ বলা হয়।


আজকাল আমরা ঘুষের মাধ্যমে চাকুরী, পছন্দ স্থানের জায়গায় বদলী, প্রমোশন, কোন কাজ সহজে করতে, ভর্তির জন্য, পেনশনের জন্য, হাউজ লোনের জন্য, মিথ্যা সার্টিফিকেট পাওয়া জন্য সুবিধা ভোগ করে থাকি। এ ব্যাপারে আরো পরিস্কার ভাবে বলতে চাই কোন কর্মচারী কিংবা কর্মকর্তা হয়তো স্বীয় কাজে অবহেলা করে কোন জরুরী বিষয়কে ফেলে রাখে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বাড়তি কিছু দানে বাধ্য করে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জরুরী ভিত্তিতে কাজটি সম্পাদনের জন্য ঘুষ দিয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে ‘লাল ফিতার দৌরত্বের’ প্রবাদটির স্মার্তব্য। লাল ফিতার বন্দি ফাইল টাকা চায়। বিলম্ব হয় এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে যেতে। ফাইল ডিসপাস করতে বিলম্বের আর কোন কারন- রয়েছে একটি সামাজিক ব্যাধি ‘ঘুষ’। ‘ঘুষ’ দিলেই ফাইল চাকা পায় এবং দ্রুত এক টেবিল থেকে অন্য টেবিল হয়ে কার্য সম্পাদন হয়ে আসে। আজকাল প্রায়ই ঘুষকে অনেকে বকশিসের সাথে তুলনা করেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। ঘুষ ও বকশিষ সম্পুর্ণ ভিন্ন দুটি বিষয়। ঘুষ হচ্ছে- দায়িত্ব অবহেলা করে, পূর্বাহ্নে কিছু হাতড়ে নিয়ে পরবর্তিতে কাজ করা আর বকশিষ হচ্ছে কোন কাজ সুচারু রূপে সমাধা করার পর খুশি মনে সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু দিলে তাই ঘুষ দানে উদ্বুদ্ধ কিংবা বাধ্য করা নয়। তাছাড়া ‘ঘুষ’ দানের ব্যাপারে বিভিন্ন রকমের মন্তব্য রয়েছে। অপর দিকে বকশিষের ব্যাপারে কোনরূপ মন্তব্য নেই কিংবা এজন্য উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করা হয় না। দাতা বকশিষ দেন খুশি হয়ে আর ঘুষ দেন অসন্তষ্ট হয়ে এবং সম্পুর্ণ রূপে বাধ্য হয়ে। ‘ঘুষ’ কে এভাবেও বলা যায়, দাতাকে নানা কায়দায় আটকে সোজা কাজের জন্য জটিলতার সৃষ্টি করে দাতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গ্রহিতা তার ইচ্ছামত বেশ মোটা ধরনের সুবিধা আদায় করে নেয়াই ঘুষ। এক্ষেত্রে জোর জবরদস্তি রয়েছে, দর কষাকষি রয়েছে। কিন্তু বকশিষে এগুলি নেই। অতএব প্রচলিত অর্থে ‘ঘুষ’ ও ‘বকশিষ‘ সমর্থক শব্দ মনে হলেও আসলে শব্দ দু’টি সম্পুর্ণ রূপে পরস্পর বিরোধী। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় প্রায় সবাই কম বেশি ঘুষ নেয় বা দেয়। কিন্তু যখন এব্যাপারে আপনি কাউকে জিজ্ঞাসা করবেন তখন সংশ্লিষ্ট উত্তর দানকারী বলবেন ‘না আমি ঘুষ খাই না’ অর্থাৎ ঘুষ খেয়েও না খাওয়ার দোহাই দিচ্ছি সবাই। এটা আশার ব্যাপার হচ্ছে রাজনৈতিক, আমলা, কর্মচারী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, পেশাজীবিদের বেশ বড়-সড় একটা অংশ কিন্তু এখনো সৎ রয়ে গেছে। অনেক দুঃখ-কষ্ট, প্রতিকুলতাকে অতিক্রম করে নিজেদের ঘুষ মুক্ত রেখেছেন এরকম লোক অনেক রয়েছে। মানুষের চাহিদা অসীম আর প্রাপ্তি সসীম। এই চাওয়া এবং পাওয়াকে একসূত্রে গাঁথতে পারেনা তারাই আকৃষ্ট হয় ঘুষ নামের এই মাদকে। এর সাথে যুক্ত হয় সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্র। ঘুষ দেয়া ও নেয়া জঘন্যতম অপরাধ। কিন্তু মানুষ জেনে শুনেই বিষ পানের মত ঘুষ দেন। আর যারা গ্রহন করে তারাই জেনে শুনে নেন। ঘুষ না দিলে কোন কাজই হয় না। তাই বাধ্য হয়ে ঘুষ দেয়া হয়। সকলেই  স্বার্থ হাসিলের জন্য ঘুষ দেয়। স্বার্থ হাসিল না হলে কেউ দেয় না। সবাই তো আমার মতই জেনে শুনেই দেয়। আমাদের সমাজে ঘুষ না দেয়া এবং ঘুষ না খাওয়া দুটোই বোকামী। তবে কথা হলো- এটা খারাপ অপরাধ। যতদূর সম্ভব পরিহার করাই ভাল। ঘুষখোর প্রথম জীবনে ঘুষের বাড়তি আয়ে খুবই ভালো থাকে কিন্তু শেষ জীবনে যখন মৃত্যু পথ যাত্রী হয়ে পারাপারের পথে যাত্রা করেন তখনই দেখা দেয় বিড়ম্বনা। রোগে শোকে মুহ্যমান হয়ে যান। শত ধন-সম্পত্তি এবং টাকা-পয়সা থাকা সত্বেও আল্লাহ্র দেয়া নেয়ামত ভক্ষন করাও তার পক্ষে দূরহ হয়ে পড়ে। নিজের পাশাপাশি সন্তান-সন্ততি স্ত্রীসহ অন্যান্য সকলে রোগাক্রান্ত হন কিংবা বিভিন্ন জটিলতায় আটকে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েন। বিচারক বা হাকিমগনকে জিলুল্লাহ্ অর্থাৎ আল্লাহর ছায়া বলা হয়। হাকিমগনের উপর আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ নেই, সুতরাং ঘুষখোর হাকিমগনের জন্য পরকালে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নির্দিষ্ট রয়েছে। তাদের অপরাধ অমার্জনীয়। ঘুষখোর বিচারকদের নেক আমল, নেক কাজ কোন কাজে আসবে না। তাদের জাহান্নাম গমন রোধ করতে পারবে না। এক কথায় ঘুষখোর বিচারকের নেক কাজ হিসেবে ধরা হবে না। হাদীস শরীফে রয়েছে “আর রাশি ওয়াল মুরতাশি ফিননারে” অর্থাৎ ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহিতা উভয়ে সমান অপরাধে অপরাধী। হাদীসে সত্তর প্রকার অপরাধের উল্লেখ রয়েছে। ঘুষ গ্রহনের অপরাধ নিজের মায়ের সাথে ৩০ (ত্রিশ) বার জেনা করার সমান গর্হিত কাজ। আমাদের সমাজ ব্যবস্থার যে বিষয়টি লক্ষ্যনীয় তা হচ্ছে ‘ঘুষ’ খাওয়াটা এখন অনেকটা নেশায় পরিনত হয়েছে এবং বিভিন্ন কৌশলে ঘুষ দেয়া হচ্ছে। ঘুষ গ্রহনের বিষয়টি আমাদের সমাজে লজ্জার কোন বিষয় নয়। কাজটিতে সফল হয়, তার প্রশংসা হয়। উপরি যেখানে বড়ই এর ব্যাপারে সেখানে অন্য বিবেচনা থোড়াই আমল পায়। ঘুষের ব্যাপারে পারিবারিক প্রতিরোধ নেই। কোন পিতাই প্রায় বলেন না- তোর ঘুষের টাকায় ভাত খাব না, তোর টাকা গন্ধযুক্ত টাকা। কোন স্ত্রীই বলেন না- স্বামীকে বেতন তো অত নয়, পেলে কোথায় অত টাকা। কোন সন্তানই বলে না- তোমার পাপের ভাগ বা গুনাহর ভার তোমার একার; আমরা তোমার হালাল রুজির নুন-ভাতেই তুষ্ট ছিলাম। আনুবীক্ষনিক ব্যতিক্রম ছাড়া সন্তানের সব পিতা-মাতাই সন্তানের বাড়তি আয়ে তুষ্ট থাকেন। সন্তান একাধিক থাকলে উৎস্য নির্বিশেষে যার আয় বেশি তাকে নিয়ে বেশি গৌরব করেন।
এখন দেখা যায় সর্বধরনের চাকুরীতে নিয়োগ পেতে গেলে পদের উপর নির্ভর করে ঘুষের টাকার অংঙ্ক সবাই জানে। চাকুরীর জন্য কত টাকা নিয়োগ কর্তা বা বোর্ডের সদস্যদের ঘুষ দিতে হবে। এক একটি পদের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ঘুষ নিয়ে থাকেন। ঘুষ দাতা নিশ্চিন্তিত থাকেন তার ঘুষের টাকার চাকুরী হবে। কিন্তু ঘুষ গ্রহনকারী দেখে যে, যে ব্যক্তি ঘুষের টাকা একজনের কাছ থেকে আরো বেশি টাকা দিয়েছেন তাকেই তিনি চাকুরীটা দিয়েছেন। এখানে মেধা বা যোগ্যতা কোনটাই বিচার করা হলো না। একে তো ঘুষের কারবার, সেই ঘুষের কারবারেও কি না আবার দূনীতি। মানুষ যাবে কোথায়।


থানার ব্যাপারে জানা যায় সারা দেশের বিভিন্ন থানায় ওসি ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ বেশ পুরানো। জিডি কিংবা মামলা করতে আসামী ধরতে বা না ধরতে বাদী-বিবাদীর কাছ থেকে থানায় ওসি, এসআই’রা টাকা নেন বলে প্রায় খবর পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা যায় এই ঘুষের টাকার একটি বড় অংশই চলে যায় পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে। ভাল থানায় বদলী হয়ে আসতে ঘুষ দিতে হয়। এই বিনিয়োগের টাকা অনেক ক্ষেত্রে নিরীহ মানুষের কাছ থেকেই তুলতে হয়। এমনকি কয়েদিরা পর্যন্ত বাদ যায়না।  শীর্ষ কর্মকর্তাদের থানা থেকে ঘুষের ভাগ দেয়া বন্ধ করতে পারলে সাধারন মানুষের হয়রানী ৮০ ভাগ কমে যাবে। নিরাপত্তা কিংবা বিচারের আশায় থানায় আসা নিরীহ মানুষের ভোগান্তি ও দূর্ভোগ কমে যাবে।


উপজেলা সরকারী প্রার্থমিক শিক্ষা অফিস নানা অনিয়ম ও দূনীতির আখাড়ায় পরিনত হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট, মাসিক বেতন, বকেয়া বিল, ছুটি মঞ্জুর, প্রশিক্ষনে যাওয়া, বদলী, এরিয়ার বিল, সার্ভিস বুক নিবন্ধন করার জন্য পেনশন প্রভৃতি কাজের জন্য শিক্ষা অফিসের ক্লাষ্টারদের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, অফিসের কর্মকর্তাদের উপর নির্ভর করতে হয়। এসব কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আর্থিক সুবিধা না দিলে কোন কাজ হয় না। সবচেয়ে দূনীতি হয় শিক্ষকদের পেনশসনের টাকা পেতে। আর হিসাবরক্ষন অফিসের কর্মকর্তাদের বেশি কিছু না বল্লেও জানা যায় তারা কাজের উপর কমিশন নিয়ে থাকেন।
মোট কথা সব অফিস আদালত, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা প্রভৃতিতে ঘুষ দূর্নীতি কম-বেশী চলছে। সর্বাধিক দূর্নীতির স্বীকার হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, এর পরেই পর্যায়ক্রমে দেখা যায় স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমি প্রশাসন, কৃষি প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, ব্যাংক এনজিও, করবিভাগ। ৭/৮ বছর পূর্বে এক জরিপে দেখা যায় উল্লেখিত সেবা খাত থেকে নিতে গিয়ে মোট ৫৪৪৩ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। দূর্নীিিতর কারনে বাংলাদেশে এক বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমান ৬৭৯৬ কাটি টাকা যা ১২ হাজার প্রাইমারী স্কুল বা ৮ হাজার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা যেত। বর্তমান জরিপ করলে দেখা যাবে, আর্থিক ক্ষতির পরিমান অনেকগুন বেড়ে যাবে। দেশের প্রায় সকল অফিস আদালতে চলছে ঘুষ দেয়া-নেয়া। ক্রমেই বাড়ছে এর মাত্রা। কিন্তু একে থামাতে হবে সেজন্য চাই- নীতি বোধের উন্মেষ আর ধর্মীয় অনুভুতিশীলতার পাশাপাশি নিজস্ব উদ্দোগ।
তাই আমাদেক ঘুষ থেকে দেশ ও জাতীকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সেজন্য ব্যক্তি, গোষ্ঠি, পরিবার, অঞ্চল, সমাজ, রাষ্ট্র পর্যন্ত সর্বত্র এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানব বন্ধন, শোভা যাত্রা, সভা ছাড়াও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মস্জিদ, মন্দিরে সকল স্তর থেকে ঘুষের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে ও সমালোচনা করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিকারী শিক্ষাই ঘুষ, দূর্নীতি প্রতিরোধে সাহায্য করে। কারন নৈতিকতা অর্জন ছাড়া ঘুষ, দূর্নীতি নির্মূল করা কখনো সম্ভব নয়। মানুষকে মহত হতে হবে। কেননা মহত মানুষের জীবন ও আদর্শই সাফল্যের বাতিঘর।
পরিশেষে বলতে চাই- ঘুষ মানুষের মধ্যে সীমাহীন লোভ সৃষ্টি করে এবং দানশীলতার মত মহৎ গুনকে দূর করে দেয়। ঘুষ মানুষের উদারতা, সহনশীলতা, দানশীলতা ও উপকারীতার মনোভাবের পরিবর্তে স্বার্থপরতা, সংকির্ণতা, কৃপনতা, নির্মমতা ও প্রতিশোধকমূলক মনোভবের জন্ম দেয়। মোট কথা ঘুষ হচ্ছে মানুষের উন্নত ও আদর্শ চরিত্র গঠনের প্রতিবন্ধক।






শেয়ার করুন

0 facebook: