কবিতা
jonosrot
প্রকাশিত হয়েছেঃ 1:00 AM
ঢেঁকিঘর
সাবিরা সুলতানা
লজ্জাভরা মুখখানিকে লাল শাড়িতে ঢেকে,
শশুর বাড়ি আসলো মেয়ে পায়ে আলতা মেখে
।আপনজনদের ছেড়ে এসে বদনখানি ভার,
সুগভীর কালো চোখদুটিতে স্বপ্ন আঁকা তার
।দু এক বেলা অনাহারে যদিও কাটে দিন,
তবুও তার নাই অভিযোগ, মুখটা অমলিন।
বিয়ে হলো দু-তিন বছর,
অনেক কষ্টের মাঝেসবুরনের কুঁড়েঘরটি সাঁজলো নতুন সাঁজে।
মা হলো সে, পেলো ধরিত্রীর সেরা সম্মান,
কুঁড়েঘর আলো করে এলো তার সন্তান।
খোকার মুখে আধো বুলি দু এক পা হাটে,পুড়লো কপাল ঘটলো তাহা,
যা ছিলো তার ঘটে।স্বামীহারা হলো মেয়ে,
বয়স বছর বিশ-বাইশ,
ব্যাথাতুরা সেই হতভাগিনীর রইলোনা কেউ সহিস।
জীবন-যুদ্ধে বীরঙ্গনা এই অভাগী পল্লীনারী
,প্রতিকুল পরিবেশে বেয়ে চলেছে সংসার নামক তরী।
কখনোও কারো ক্ষেতের ফসল তুলে দেয় তার গোলায়,
সারা রাত্রি ধপাস ধপাস ঢেঁকিতে ধান ভানায়।
এমনি করে দিন,মাস,বছর কাটে যুগের উপর যুগ
খোকা তাহার বাবা হলো,
তবু নাহি জোটে সুখ।
তাসের আড্ডা জুয়ার নেশায় মাতাল হয়ে খোকা
উঠতে বসতে মা-বৌকে দিতে থাকে ধোঁকা।
হঠাৎ একদিন খোকা তাহার হইলো নিরুদ্দেশ,
পুত্রশোকে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের চক্ষু শেষ।
আঁখিদ্বয় তার অন্ধ হল,কি জানি তি দোষে?
একি খেয়ালী বিধির খেয়াল,
নাকি ভাগ্যের পরিহাসে?
বাড়লো বয়স,রোগে-শোকে দেহ হলো নুহ্যহাজারও বাঁধা,
প্রতিকুলতা করে গেল সহ্য।
চোখ হারিয়ে হারালো সে সকল কাজের ধার,
শত কষ্টের মাঝেও কভু মানেনিকো হার।
এত কিছুর মাঝেও একটা সুখের জায়গা তার,
ঘরের পাশেই আছে একটা ঝুপড়ি ঢেঁকিঘর।
দিন-দুপুরে,রাত-বিরাতে ধান ভানে একমনে,
ঢেঁকিতেই তার সর্বসুখ জানে সাধারণে।
যারা ছিলো আপনজন,সবাই হলো পর,
নিঃসঙ্গ জীবনের সঙ্গী হয়ে রইলো ঢেঁকিঘর।
পাড়ার যত বয়স্কারা,
হেথা এসে আড্ডা জমায়,
নিঃর্বাক ঢেঁকি হাসি-কান্নার সাক্ষী হয়ে রয়।
কোন একদিন সবুরনের থাকবেনা নিঃশ্বাস,
ঢেঁকিবৌ এর ঢেঁকিঘরে সবে ফেলবে দীর্ঘশ্বাস।
শেয়ার করুন
0 facebook: