Thursday, May 24, 2018

মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনিতে পুরো দমে উৎপাদন কাজ চলছে



মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনিতে পুরো দমে উৎপাদন কাজ চলছে

এম এ আলম বাবলু   

সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পের গতি সঞ্চারিত হয়েছে। বর্তমানে এই শিলা প্রকল্পে পুরো দমে কাজ চলছে। উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা পূরন না হলেও উৎপাদন কাজ তড়িৎ গতিতে চলানোর সব ব্যবস্থাই করা হয়েছে। বর্তমানে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি এখন উৎপাদনমূখী। খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম এস আওরঙ্গজেবের সর্বক্ষনিক নজরদারিতে  ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসির (জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোটিয়াম) তত্ত্বাবধানে প্রতিদিন ৩ সিফটে ৪ হাজার মেট্রিক টন গ্রানাইট শিলা উৎপাদিত হচ্ছে এ খনিতে।

জানা গেছে, সরকারী বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প, যেমন পদ্মা বহুমূখী সেতু প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্ট, পাওয়ার প্লান্টসমূহ, বিভিন্ন বিদ্যুত প্রকল্প(বাঁশখালি ও রামপাল, মহেশখালী-মাতারবাড়ী) ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পাতাল রেলে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিতব্য টানেল, কক্সবাজার বিমান বন্দর নির্মাণ প্রকল্প, রেললাইন ও রেলওয়ের বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে ভবিষ্যতে বিপুল পরিমাণ কঠিন শিলার প্রয়োজন হবে। এসব প্রকল্পে গুণগতভাবে উৎকৃষ্ট মধ্যপাড়ার গ্রানাইট শিলার ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মধ্যপাড়ার গ্রানাইট শিলা দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প রপপুর তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া ও ৪ লেন প্রকল্প, যমুনা নদী রক্ষা প্রকল্প, রেলেওয়ে নির্মাণ কাজসহ অনান্য কাজে এই শিলা ব্যবহৃত হচ্ছে। মধ্যপাড়ার প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ শিলা বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ভূ-পৃষ্টের পাথরের তুলনায় অনেক উন্নতমানের ও দেড়গুণ শক্তিশালী। বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের প্রেক্ষিতে অবকাঠামোগত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে গ্রানাইট পাথর ও স্টোন ডাস্টের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মধ্যপাড়া খনি বিশে^র একমাত্র খনি যেখান হতে গ্রানাইট পাথর উত্তোলন করা হয়। ব্যুরো অফ রির্সাস টেস্টিং কনসালটেশন (বিআরটিসি), বুয়েটের বিভিন্ন টেস্ট হতে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী এ শিলার ফিজিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোপার্টিজ নির্মাণ কাজের জন্য কন্সট্রাকশন ম্যাটারিয়াল হিসেবে যথেষ্ট মজবুত, টেকশই ও পরিবেশবান্ধব। এছাড়া ও ইংল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর থেকে রাসায়নিক পরীক্ষায় মধ্যপাড়ার শিলা ক্ষতিকারক প্রমাণিত হয়নি। ভূ-গর্ভস্থ খনির প্রায় ৩০০ মিটার গভীর থেকে এ গ্রানাইট শিলা উত্তোলিত হয় বলে জানা যায়। মধ্যপাড়া খনির সঙ্গে উন্নত রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় দেশের যে কোন স্থানে শিলা পরিবহনের সুযোগ রয়েছে। উন্নতমানের পাশাপাশি মধ্যপাড়ার কঠিন শিলার মূল্য সাশ্রয়ী। লোডিং ও ওজন আধুনিক হওয়ায় ক্রেতারা ব্যাপকভাবে এ শিলা ব্যবহার করছে। যেখানে পাশর্^বর্তী ভারত হতে আমদানিকৃত ৩-৪ সাইজের পাকুর পাথরের মূল্য টন প্রতি ৩৫শ টাকা সেখানে মধ্যপাড়া কঠিন শিলার মূল্য টন প্রতি ২৯৫০ টাকা। এ কারণে প্রতিনিয়ত এই শিলার চাহিদা বাড়ছে। মধ্যপাড়া খনি থেকে প্রতিদিন তিন শিফটে ৫,৫শ মেট্রিক টন শিলা উত্তোলন এবং নতুন স্টোপ উন্নয়নের জন্য জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোটিয়ামের (জিটিসি) মধ্যে ২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে ৬ বছরের জন্য বৈদেশিক ও স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ১৪শ কোটি টাকা মূল্যমানের মাইন ম্যানেজমেন্ট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিমতে ঠিকাদার ১২টি নতুন স্টোপ উন্নয়ন ও ৯২ লক্ষ মেট্রিক টন গ্রানাইট শিলা উত্তোলন করবে। এ চুক্তির আলোকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখ হতে জিটিসি আগের জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদ ২৩ মার্চ/১৮ তারিখে খনি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি উৎপাদন বাড়িয়ে প্রতিদিন ২০ হাজার মে. টন উৎপাদন টার্গেট করার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

মধ্যপাড়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম এস আওরঙ্গজেব এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নির্ধারিত লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত না হলেও এই খনিতে পুরো দমে উৎপাদন কাজ চলছে।


শেয়ার করুন

0 facebook: