Friday, April 26, 2019

মেয়েদের হয়রানি বন্ধে টি-শার্টে স্পষ্ট বার্তা " গা ঘেঁসে দাঁড়াবেন না "





11
শারমিন ইসলাম
মেয়েরা ঘরে বাইরে সমানতালে কাজ করছেন । বাইরে কাজের লক্ষে ছুটতে হয় তাঁদের ।আর গণপরিবহণ হচ্ছে একমাত্র ভরসা । গণপরিবহনে প্রতিনিয়তই ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হয় নারী যাত্রীরা।  সংরক্ষিত আসন থেকেও  নেই অনেক সময় দাঁড়িয়ে পথ পারি দিতে হয় ।  কখনবা  কর্মজীবী নারী ও শিক্ষার্থীদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করে পুরুষদের পাশাপাশি ধাক্কাধাক্কি করে দাঁড়িয়ে, বাসের পা-দানিতে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।  এর সুযোগে বিকৃত মস্তিকের কিছু লোক গা ঘেঁসে বসতে কিংবা দাঁড়াতে চায় ।  অসহায় নারীরা কখনও মুখ বুঝে বা প্রতিবাদ করে গন্তব্য যান। বাসে যৌন হয়রানির ঘটনা ঢাকা ও বাংলাদেশের অন্য শহরে নৈমিত্তিক। একটি সমীক্ষা জানিয়েছে, নিত্যযাত্রী মেয়েদের ৯৮ শতাংশই পুরুষ সহযাত্রীর খারাপ স্পর্শের শিকার। এমনকী স্কুলের ছোট ছোট মেয়েরাও হয়রানির হাত থেকে রেহাই পায় না।


এমন এক চিন্তা থেকে মেয়েদের জন্য এ বার এসেছে নতুন টি-শার্ট। নতুন টি-শার্ট টির ডিজাইনার ২৮ বছর বয়সী জিনাত জাহান নিশা একজন নবীন ডিজাইনার। ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ-এর চারুকলা অনুষদ থেকে চিত্রকলায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তিনি ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, ‘এই টি-শার্ট পরলেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে না। আমাদের সোচ্চার আওয়াজই পারে এই সব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো নির্মূল করতে।
তিনি আরও জানান  বছর খানেক আগে বাসে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পরে তিনি প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু অন্য সহযাত্রীরা তাঁর পাশে এসে দাঁড়ানোর বদলে উল্টে তাঁকেই মুখ বন্ধ করার পরামর্শ দেন। সে রাতে তিনি ক্ষোভে কাঁদতে কাঁদতে নতুন একটি খোঁপার কাঁটার ডিজাইন করেছিলেন, যাতে লেখা ছিল গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না!পরে সেই প্রতিবাদী কাঁটা ছড়িয়ে পড়েছিল মেয়েদের খোঁপায় খোঁপায়। এর পরে এখন এই টি-শার্ট।
খোঁপার কাঁটা দেখে হিজাব পরা অনেক মেয়ে সংস্থার কাছে আসেন হিজাব পিন’-এ ওই কথা লিখে দেওয়ার জন্য। জিনাত জানানপ্রমাণ হচ্ছে হিজাব-বোরখা পরা মেয়েরাও গণপরিবহণে নিরাপদ নয়। আর এই খবরটা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাঁরা গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন নালেখা হিজাব পিন বিনামূল্যে বিলোনোর কথা ভেবেছেন। কারণ হয়রানির প্রতিষেধক হিসাবে অনেকেই মেয়েদের হিজাব-বোরখায় চেহারা লুকিয়ে রাস্তায় বেরনোর পরামর্শ দেন। তাতেও যে যৌন হয়রানি থেকে রেহাই মেলে না, এটা সকলে জানুক। জিনাত বলেন, ‘‘ভিড়ের মধ্যে পুরুষ সহযাত্রীর স্পর্শ এড়ানো সম্ভব নয়। সব স্পর্শেই খারাপ উদ্দেশ্য থাকে, তা নয়। অনেক পুরুষই বেশ সহানুভূতিশীল হন। কিন্তু খারাপ মানুষ আবার ভিড়ের সুযোগ নিয়ে খরাপ আচরণ করতে মুখিয়ে থাকে। খোপার কাঁটা বা টি-শার্টের বার্তা তাদের জন্যই।’’
জিনাতের ফেসবুক পোস্টে মন্তব্যের ঢল নেমেছে। কারও কারও দাবি, টি-শার্টের এই বার্তা কুরুচিকর। ভিড়ের মধ্যে গা ঘেঁষে না-দাঁড়িয়ে উপায়ই বা কী! এক নারী অধিকার কর্মী আবার বলছেন, বাজার অর্থনীতিতে তো কত কিছুই বিক্রি হয়! এটাও তেমন গিমিক। তবে এই বার্তা যদি কারও মগজে একটু ধাক্কা দেয়, ক্ষতি কি
আবার অনেকের মন্তব্যেই যুক্তির বদলে উঠে এসেছে পুরুষতন্ত্রের নীচতানারী মাত্রেই যে ভোগ্যা। অনেকে হয়রানির জন্য নারীকে দায়ী করতেও লজ্জা পাননি।
এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন অনেকে, আবার অনেকেই এর সমালোচনা করছেন।মোস্তাফিজুর নূর ইমরান নামের একজন এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছেন , "লোকে তো অনেক কিছু্ই বলবে, লোকের কাজই বলা। এগিয়ে যাও।"অনেকেই বলেছেন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নারীদের এমন পোশাক পরা উচিত নয়। করিম নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, "মানুষের কমেন্টগুলো দেখুন। আপনাদের বোঝা উচিত এটা বাংলাদেশ।"
অনেকেই ছবিগুলোকে বিক্রি বাড়ানোর কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন।
কিন্তু জিনাত জাহান নিশা জানান, বিক্রি বাড়ানোর পদ্ধতি বা আলোচনায় আসার কৌশল হিসেবে এই পণ্য তৈরি করেননি তারা। বাংলাদেশের গণপরিবহন, রাস্তাঘাটে নারীরা যেমন হয়রানির শিকার হন তার প্রতিবাদ হিসেবে বাজারে ছেড়েছেন এই পণ্য।
"
সামাজিক মাধ্যমে এই ছবিগুলো ভাইরাল করার উদ্যোগ কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। যারা এগুলো নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন, ছবি বিকৃতভাবে এডিট করে ট্রল করছেন, তারাই এটিকে ভাইরাল করেছেন," বলেন মিজ. নিশা।তবে এভাবে সমালোচনা ছড়িয়ে পরার ফলে টি-শার্ট তৈরির উদ্দেশ্য সফল হয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা
"
যাদের উদ্দেশ্যে এই লেখা সম্বলিত টি-শার্ট তৈরি করা, তাদের গায়ে ঠিকই লেগেছে এবং তারাই কিন্তু এর সমালোচনা করছেন।" অনেকে প্রশংসা বা অনুপ্রেরণা দিয়ে মন্তব্য করলেও নেতিবাচক মন্তব্য করা মানুষের সংখ্যাই বেশি বলে মনে করেন মিজ. নিশা। 





শেয়ার করুন

0 facebook: