বাংলা একাডেমির জন্ম ও বিকাশ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গঠন প্রক্রিয়ার সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে বিজড়িত। প্রতি বছরই বাংলা একাডেমি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের বিশেষ সদস্য পদ দেন। সেই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন কণ্ঠশীলন অধ্যক্ষ মীর বরকত । লেখালেখি ও সাহিত্য চর্চায় বিশেষ অবদান রাখায় তিনি বাংলা একাডেমির এ আজীবন সদস্য পদ লাভ করেন। এদেশের আবৃত্তিশিল্পের প্রিয়মুখ ও কণ্ঠশীলনের বর্তমান অধ্যক্ষ মীর বরকত। গণমাধ্যম ইন্সটিটিউট, পিআইবি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র, ছায়ানট (ভাষার আলাপ), বাংলাদেশ টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ইন্সটিটিউট, শিল্পকলা একাডেমিসহ প্রায় শতাধিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে তিনি দীর্ঘদিন থেকে বাচিক প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করে আসছেন।
এছাড়া
বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রমিত
উচ্চারণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। সে হিসেবে তার
গুণমুগ্ধ শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অগণিত। বাংলাদেশের বহু আবৃত্তি ও
নাট্য সংগঠনে তিনি প্রশিক্ষক হিসেবে
নিয়মিতভাবে কাজ করছেন। ১৯৫৮ সালের এইদিনে
গুণী এই বাচিকশিল্পী ময়মনসিংহ
জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পোশাকি নাম
মীর বরকতে রহমান হলেও দেশের শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনে তিনি মীর বরকত
নামেই পরিচিত। তার পিতার নাম
মীর মসুদার রহমান ও মাতার নাম
রশিদা বেগম। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক পুত্র
ও দুই কন্যা সন্তানের
জনক।
মীর
বরকত ১৯৮৩ সালে নাট্যশিক্ষাঙ্গন
থেকে এক বছরের নাট্য
সার্টিফিকেট বিষয়ক কোর্স ও ১৯৮৪ সালে
গণমাধ্যম ইন্সটিটিউটে সংবাদ উপস্থাপনা ও রিপোর্টিং কোর্সে
অংশ নেন। তার প্রকাশিত
গ্রন্থের নাম ‘আবৃত্তির ক্লাস’। মীর বরকতের
একক আবৃত্তি অনুষ্ঠানের নাম ছিল ‘আজ
অভিষেক আমার’।
তিনি
মোট ২৯টি আবৃত্তি প্রযোজনার
নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে তার
নিজের গ্রন্থনায় ‘গুটুল মুটুল’, ‘কেবল হাসির দেশে’,
‘ওরা বেজে ওঠে শূন্য
প্রহরে’, ‘আবদারের আধঘণ্টা’, ‘রাজপুত্তুর’, ‘রঙ্গ’, ‘আনন্দেতে জাগো’, ‘সবচেয়ে সুন্দর (গল্পকথন)’, ‘আলো মাখো ভালো
থাকো’, ‘তোমার আকাশ দাও’, ‘যুদ্ধ
শেষের যুদ্ধ’, ‘একাত্তরের ফুল’, ‘বারো গাঁয়ের তেরো
ভূত’, ‘জয় বাংলার জয়’,
‘জল হাওয়ার কাব্য’ ও ‘অন্তর্দহন’ অন্যতম।
তার
অন্যান্য আবৃত্তি প্রযোজনাগুলোর মধ্যে- বুদ্ধদেব বসুর রচনায় ‘তপস্বী
ও তরঙ্গিণী’, সুনীল জানার রচনায় ‘রবি ঠাকুর কবি
ঠাকুর’, সেলিনা হোসেনের রচনায় ‘আমিনা মদিনার গল্প’ সহ মুহম্মদ নুরুল
হুদার রচনায় ‘রোমিও জুলিয়েটের গল্প’, বুদ্ধদেব বসুর রচনায় ‘অনাম্নী
অঙ্গনা’, রফিকুর রশীদের রচনায় ‘ভাষার লড়াই’, রোজিনা বেগমের রচনায় ‘দেশদ্রোহীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী’, জসীম উদ্দিনের রচনায়
‘নক্সী কাঁথার মাঠ’, রাজীব দের রচনায় ‘বর্ষামানব’,
লুৎফুর রহমান রিটনের রচনায় ‘ছড়ায় ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ’,
খালেদ হোসাইনের রচনায় ‘রাণী যাবে বাপের
বাড়ি’, দেশটিভিতে ছোটদের অনুষ্ঠান ‘কল্পলোকের গল্পকথা’ সহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
রচনায় ‘শান্তিগীত’ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তিনি
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনায় ‘রাজা-রানী’, মনোজ
মিত্রের রচনায় ‘যা নেই ভারতে’
ও নাগিব মাহফুজের রচনা ও রাফিক
হারিরির রূপান্তরে ‘যাদুর লাটিম’ মঞ্চনাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনটি নাটকই নির্মিত হয়েছে কণ্ঠশীলনের প্রযোজনায়। তিনি কণ্ঠশীলনের পাশাপাশি
কল্পরেখার সভাপতি ও উদ্ভাসন, মুক্তালয়
আবৃত্তি বিকাশ কেন্দ্রের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও
তিনি ছায়ানট সাধারণ সংসদের সদস্য হিসেবে নিয়োজিত আছেন। মীর বরকত ইউনিসেফ
প্রবর্তিত মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসহ
এ যাবৎ প্রচুর পুরস্কার-সম্মাননা পেয়েছেন। পেয়েছেন স্বরকল্পন আবৃত্তি চক্র থেকে শ্রেষ্ঠ
নির্দেশক সম্মাননাও। আবৃত্তি অঙ্গন থেকে পেয়েছেন অপু
সম্মাননা পদক। আনন্দমোহন কলেজ
থেকে শ্রেষ্ঠ বক্তা ও অভিনয়ে পেয়েছেন
বিশেষ সম্মাননা। শ্রেষ্ঠ নির্দেশক হিসেবে ঢাকা স্বরকল্পন থেকে
আবৃত্তি সম্মাননা পদক এবং চয়ন
সাহিত্য ক্লাব থেকে লাভ করেছেন
চয়ন সাহিত্য ক্লাব স্বর্ণপদক।
বাংলাদেশ
টেলিভিশনসহ বিভিন্ন চ্যানেলে আবৃত্তি, গল্প বলা, ছড়া
প্রযোজনার নির্দেশনা ও আলোচনা অনুষ্ঠান
এবং আবৃত্তিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। দেশ টিভির ধারাবাহিক
গল্পানুষ্ঠান ‘কল্পলোকের গল্পকথা’র নির্দেশক ছিলেন
মীর বরকত। তিনি বাংলাভিশনের সংবাদ
বিষয়ক রিপোর্টারদের এবং আরটিভির সংবাদ
উপস্থাপকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন।
0 facebook: